Dhaka 1:20 am, Saturday, 18 May 2024

পুরান ঢাকায় ঐতিহ্যবাহী নবাবের পুকুরে ৫ টাকায় দিনভর গোসল

৫ টাকায় গোসল। তাও আবার ২০০ বছরের পুরোনো পুকুরে! এক টিকিটেই দিনভর চরম উদ্দীপনায় চলে ডুবোসাঁতার, সঙ্গে জলকেলি। এমন একটি পুকুর আছে পুরান ঢাকার আহসানমঞ্জিল সংলগ্ন এলাকায়। নবাবী আমলের এই জলাশয় গোল তালাব পুকুর নামে পরিচিত। স্থানীয়রা ডাকেন নবাব বাড়ির পুকুর। রোববার দুপুরে সরেজমিনে এই পুকুরের কাছে গিয়ে দেখা যায়, প্রখর রোদে পুড়ছে চারপাশ। কাঠফাঁটা রোদে যখন জনজীবন দুর্বিষহ তখন এই পুকুর দিচ্ছে সামান্য স্বস্তি । গোল তালাবের চারপাশের আম, কাঁঠাল, নারিকেলসহ নানা ফল ও ঔষধি গাছে ঘেরা, যার ফলে প্রচণ্ড তাপপ্রবাহের মাঝেও এর পানি থাকে ঠান্ডা। প্রচণ্ড তাপদাহে স্বস্তি পেতে দূরদূরান্ত দেখে গোসলের জন্য আসছে অসংখ্য মানুষ। শিশু-কিশোর থেকে শুরু করে সব বয়সের মানুষেরা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে গোল তালাব। এই পুকুর শহরের কর্মব্যস্ত মানুষকে দিচ্ছে গ্রামের সুনিবিড় শীতল ছোঁয়া। মনে করিয়ে দিচ্ছে দুষ্টু মিষ্টিতে ভরা ছেলে বেলাকে।

আরো পড়ুন:গরমে প্রশান্তি দেবে আম-পাবদার ঝোল

শত বছর পরেও এই পুকুর এখনো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন। প্রতিদিন শতশত মানুষ গোসল করার পরও এর পানি টলটলে স্বচ্ছ। এর পেছনের রহস্য, ৫ টাকায় পুকুরে গোসল করতে পারলেও ব্যবহার করা যায় না সাবান-শ্যাম্পু । কাচতে পারে না কাপড়। প্রয়োজন হলে পাশেই রয়েছে আলাদা গোসলখানা ও পোশাক পরিবর্তনের জায়গা। পুকুরে নামায় নিষেধাজ্ঞা রয়েছে সাঁতার না জানা লোকদের। নবাববাড়ি ট্যাংক কমিটির সদস্য রেহানুল হক রেহান জানান, সকাল ৭টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত খোলা থাকে পুকুরের গেট। যে কেউ চাইলেই এখানে গোসল সেরে নিতে পারেন । রেহানুল হক অভিযোগ করেন, তবে শত বছরের এই ঐতিহ্যের দিকে নজর পড়েছে কিছু দখলদারদের। জাল দলিল তৈরি করে একাধিকবার চেষ্টা হয় দখলের।

আরো পড়ুন:তীব্র গরমে গরম ও বিদ্যুৎ বিপর্যয়ে বেড়েছে তালপাখা বিক্রির ধুম

নবাব বাড়ির পুকুরের ইতিহাস সম্পর্কে জানা যায়, পুরান ঢাকার বাংলাবাজার এলাকায় কুমার সম্প্রদায়ের লোক, মাটি দিয়ে তৈরি করেন বিভিন্ন সামগ্রী। তাদের প্রয়োজনে এ স্থান থেকে মাটি নেওয়া হতো। মাটি কাটতে কাটতে এক পর্যায়ে সৃষ্টি হয় ছোট আকারের গর্তের। এ গর্ত পরবর্তী সময়ে রূপ নেয় জলাশয়ে। তখন জমিদার মোগল শেখ এনায়েত উল্লাহ এটিকে জলাশয় হিসেবে ব্যবহার করতেন। পরে ১৮৩০ সালে নবাব খাজা আলিম উল্লাহ জলাশয়টি কিনে নেন। এরপর ৮ বিঘা জমির মধ্যে জলাশয়টি সংস্কার করে বানানো হয় পুকুর। পাঁচ টাকায় শুধু গোসলই নয়, কর্মব্যস্ত জীবনে এ পুকুর দিচ্ছে শীতল প্রশান্তি। এখন আর নবাবরা না থাকলেও মাত্র ৫ টাকায় স্বচ্ছ পানির এই পুকুরে যে কেউ এসেই ব্যবহার করতে পারছে অনায়াসে।

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

আপডেট সংবাদ

পুরান ঢাকায় ঐতিহ্যবাহী নবাবের পুকুরে ৫ টাকায় দিনভর গোসল

Update Time : 02:53:21 pm, Monday, 29 April 2024

৫ টাকায় গোসল। তাও আবার ২০০ বছরের পুরোনো পুকুরে! এক টিকিটেই দিনভর চরম উদ্দীপনায় চলে ডুবোসাঁতার, সঙ্গে জলকেলি। এমন একটি পুকুর আছে পুরান ঢাকার আহসানমঞ্জিল সংলগ্ন এলাকায়। নবাবী আমলের এই জলাশয় গোল তালাব পুকুর নামে পরিচিত। স্থানীয়রা ডাকেন নবাব বাড়ির পুকুর। রোববার দুপুরে সরেজমিনে এই পুকুরের কাছে গিয়ে দেখা যায়, প্রখর রোদে পুড়ছে চারপাশ। কাঠফাঁটা রোদে যখন জনজীবন দুর্বিষহ তখন এই পুকুর দিচ্ছে সামান্য স্বস্তি । গোল তালাবের চারপাশের আম, কাঁঠাল, নারিকেলসহ নানা ফল ও ঔষধি গাছে ঘেরা, যার ফলে প্রচণ্ড তাপপ্রবাহের মাঝেও এর পানি থাকে ঠান্ডা। প্রচণ্ড তাপদাহে স্বস্তি পেতে দূরদূরান্ত দেখে গোসলের জন্য আসছে অসংখ্য মানুষ। শিশু-কিশোর থেকে শুরু করে সব বয়সের মানুষেরা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে গোল তালাব। এই পুকুর শহরের কর্মব্যস্ত মানুষকে দিচ্ছে গ্রামের সুনিবিড় শীতল ছোঁয়া। মনে করিয়ে দিচ্ছে দুষ্টু মিষ্টিতে ভরা ছেলে বেলাকে।

আরো পড়ুন:গরমে প্রশান্তি দেবে আম-পাবদার ঝোল

শত বছর পরেও এই পুকুর এখনো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন। প্রতিদিন শতশত মানুষ গোসল করার পরও এর পানি টলটলে স্বচ্ছ। এর পেছনের রহস্য, ৫ টাকায় পুকুরে গোসল করতে পারলেও ব্যবহার করা যায় না সাবান-শ্যাম্পু । কাচতে পারে না কাপড়। প্রয়োজন হলে পাশেই রয়েছে আলাদা গোসলখানা ও পোশাক পরিবর্তনের জায়গা। পুকুরে নামায় নিষেধাজ্ঞা রয়েছে সাঁতার না জানা লোকদের। নবাববাড়ি ট্যাংক কমিটির সদস্য রেহানুল হক রেহান জানান, সকাল ৭টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত খোলা থাকে পুকুরের গেট। যে কেউ চাইলেই এখানে গোসল সেরে নিতে পারেন । রেহানুল হক অভিযোগ করেন, তবে শত বছরের এই ঐতিহ্যের দিকে নজর পড়েছে কিছু দখলদারদের। জাল দলিল তৈরি করে একাধিকবার চেষ্টা হয় দখলের।

আরো পড়ুন:তীব্র গরমে গরম ও বিদ্যুৎ বিপর্যয়ে বেড়েছে তালপাখা বিক্রির ধুম

নবাব বাড়ির পুকুরের ইতিহাস সম্পর্কে জানা যায়, পুরান ঢাকার বাংলাবাজার এলাকায় কুমার সম্প্রদায়ের লোক, মাটি দিয়ে তৈরি করেন বিভিন্ন সামগ্রী। তাদের প্রয়োজনে এ স্থান থেকে মাটি নেওয়া হতো। মাটি কাটতে কাটতে এক পর্যায়ে সৃষ্টি হয় ছোট আকারের গর্তের। এ গর্ত পরবর্তী সময়ে রূপ নেয় জলাশয়ে। তখন জমিদার মোগল শেখ এনায়েত উল্লাহ এটিকে জলাশয় হিসেবে ব্যবহার করতেন। পরে ১৮৩০ সালে নবাব খাজা আলিম উল্লাহ জলাশয়টি কিনে নেন। এরপর ৮ বিঘা জমির মধ্যে জলাশয়টি সংস্কার করে বানানো হয় পুকুর। পাঁচ টাকায় শুধু গোসলই নয়, কর্মব্যস্ত জীবনে এ পুকুর দিচ্ছে শীতল প্রশান্তি। এখন আর নবাবরা না থাকলেও মাত্র ৫ টাকায় স্বচ্ছ পানির এই পুকুরে যে কেউ এসেই ব্যবহার করতে পারছে অনায়াসে।