মালয়েশিয়ায় যথাযোগ্য মর্যাদা এবং উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে দুইদিনব্যাপী মহান শহীদ দিবস এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন করা হয়। এই উপলক্ষে গত মঙ্গলবার , কুয়ালালামপুরস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশন, সেন্টার ফর অল্টারনেটিভস বাংলাদেশ এবং মালয়েশিয়ার টেলরস ইউনিভার্সিটির স্কুল অফ লিবারেল আর্টস অ্যান্ড সায়েন্সেস এর সহযোগিতায় ‘প্রযুক্তির মাধ্যমে বহুভাষিকতার প্রসার’ এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ উদযাপন করেছে। খ্যাতনামা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান টেইলর’স বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘গ্র্যান্ড হলে’ আয়োজিত এই অনুষ্ঠানের বিভিন্ন পর্বে উচ্চপর্যায়ের আলোচনা, প্যানেল আলোচনা, প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনী, আলোকচিত্র প্রদর্শনী এবং নয়টি দেশের শিল্পীদের পরিবেশনায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। উক্ত অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এম পির ধারণকৃত বক্তব্য প্রচার করা হয়। কুয়ালালামপুর থেকে প্রবাসী সাংবাদিক এস এম সোনিয়া হালিমা হামিদ এ তথ্য জানিয়েছেন।
অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন মালয়েশিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার মো. শামীম আহসান। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং ভাষা শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করে হাইকমিশনার মো. শামীম আহসান বলেন, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস এখন সারা বিশ্বে ভাষাগত বৈচিত্র্য উদযাপনের দিনে পরিণত হয়েছে। এ প্রসঙ্গে তিনি ঐতিহাসিক ভাষা আন্দোলনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভূমিকাসহ শহীদদের অবদানের কথা স্মরণ করেন। অনুষ্ঠানের মূল আলোচনা সভায় অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ, মিসেস মাকি কাতসুনো-হায়াশিকাওয়া ইউনেস্কো আঞ্চলিক অফিস, জাকার্তা এর ধারণকৃত বক্তব্য প্রচারিত হয়। অন্যান্য বক্তাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, প্রফেসর ড. অনিন্দিতা দাশগুপ্ত। এতে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের উপর একটি প্রামণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বের প্যানেল আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউট এর পরিচালক ড. ইয়াং হুই, এশিয়া প্যাসিফিক জার্নাল অফ ফিউচার ইন এডুকেশন অ্যান্ড সোসাইটি (এপিজেএফইএস) এর ব্যবস্থাপনা সম্পাদক ড. কালাই ভানি রাজন্দ্রাম এবং স্যার এম বিশ্বেশ্বরায়া ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি ব্যাঙ্গালোর এর শিক্ষক গৌথম কুমার। এ সময় আলোচকগণ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালনে সকল ভাষাভাষীর ঐক্যের চেতনার কথা বলেন। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসকে তারা ঐক্যের একটি শক্তিশালী ও অনুপ্রেরণামূলক বহিঃপ্রকাশ হিসেবে বর্ণনা করেন। বক্তাগণ বহুভাষিকতার প্রসারে প্রযুক্তির ব্যবহারের উপর গুরুত্বারোপ করেন।
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালনের পাশাপাশি হাই কমিশনার মো. শামীম আহসান বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ এবং বিদেশী অতিথিদের সাথে নিয়ে শহীদ দিবস এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত আলোকচিত্র প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন। এই প্রদর্শনীতে ’৫২ র ভাষা আন্দোলন এর পথ ধরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের নেতৃত্বে স্বাধীনতা যুদ্ধে চূড়ান্ত বিজয়ের ধারাবাহিক অগ্রগতির চিত্র তুলে ধরা হয়। অনুষ্ঠানের শেষ পর্বে নয়টি দেশের শিল্পীদের সমন্বয়ে একটি বর্ণাঢ্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশিত হয়। ভারত, মালয়েশিয়া, মালদ্বীপ, নাইজেরিয়া, রাশিয়ান ফেডারেশন, সুদান, তানজানিয়া, নেপাল এবং বাংলাদেশ হাই কমিশন পরিবারের সদস্যগণ এবং শিল্পীদের মনোমুগ্ধকর পরিবেশনা দর্শকদের বিমোহিত করে।একই মঞ্চে বিভিন্ন দেশের শিল্পীদের বর্ণিল পরিবেশনা এক অনন্য সাংস্কৃতিক সম্প্রীতির বহিঃপ্রকাশ ঘটায়। আজ বুধবার সকালে কুয়ালালামপুরস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশন ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে মহান শহীদ দিবস এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন করে। অনুষ্ঠানের প্রারম্ভে হাইকমিশন প্রাংগনে প্রভাতফেরির মাধ্যমে হাইকমিশনের অস্থায়ী শহীদ মিনারে হাইকমিশনার মো. শামীম আহসান এর নেতৃত্বে হাইকমিশন পরিবারের সদস্যবৃন্দ পুস্পস্তবক অর্পণ করেন।
2 thoughts on “মালয়েশিয়ায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালিত”