বাগেরহাটের সুন্দরবনে আবারও অগ্নিকাণ্ড হয়েছে। গতকাল শনিবার পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জের আমুরবুনিয়ার লতিফের ছিলা এলাকায় লাগা আগুন গতকাল রাতেও নিয়ন্ত্রণে আসেনি। ধারণা করা হচ্ছে, অগ্নিকাণ্ডে প্রায় ১০ একর বনভূমি পুড়ে গেছে। পানির অভাবে রাতে আগুন নেভানোর কাজ স্থগিত রাখার কথা জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস।
গতকাল বেলা ১১টার দিকে সুন্দরবনে আগুন দেখতে পেয়ে বনকর্মীদের অবহিত করেন স্থানীয়রা। পরে ফায়ার সার্ভিসে খবর দেওয়া হয়। বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, আগুনের বিস্তার ঠেকাতে চারদিকে ‘ফায়ার লেন’তৈরি করা হয়েছে।
বাগেরহাট ফায়ার সার্ভিসের উপসহকারী পরিচালক মো. সাইদুল আলম চৌধুরী আমাদের সময়কে বলেন, বাগেরহাট ও মোরেলগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের তিনটি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে। বন বিভাগের কর্মী ও স্থানীয়রা তাদের সহযোগিতা করছেন।
বনের ভেতর মধু সংগ্রহে যাওয়া মৌয়ালের মাধ্যমে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে ধারণা করছেন পূর্ব সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের স্টেশন কর্মকর্তা (এসও) আনিসুর রহমান। তিনি বলেন, পূর্ব সুন্দরবনের বন কর্মকর্তারা উপস্থিত থেকে আগুন নিয়ন্ত্রণের কাজ তদারকি করছেন। আগুনে বনের কী পরিমাণ পশুপাখি এবং বনাঞ্চল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তা আগুন নিয়ন্ত্রণে না আসা পর্যন্ত বলা যাচ্ছে না বলে তিনি জানান।
গতকাল কমপক্ষে ১০ একর পরিমাণ বনভূমিতে আগুন জ্বলতে দেখার কথা জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। জিউধরা গ্রামের খলিলুর রহমান জানান, বেলা ১১টার দিকে ধোঁয়া উড়তে দেখে তারা আমুরবুনিয়া টহল ফাঁড়ির বনরক্ষীদের জানান। দ্রুত বনরক্ষীরা অগ্নিকাণ্ডের এলাকায় ছুটে যান। পরে পার্শ্ববর্তী গ্রামে খবর দিলে শতাধিক লোক গিয়ে ফায়ার লেন কেটে আগুনের বিস্তৃতি রোধে চেষ্টা চালান। গতকাল রাতে এ প্রতিবেদন তৈরি করা পর্যন্ত দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছে বলে জানা গেছে।
আরও পড়ুন:মিথিলার মুকুটে নয়া পালক
তবে স্থানীয় কয়েকজন বলেন, তাদের ধারণা, আগুন লাগছে অন্ত দুদিন আগে। ঘটনাস্থল বন বিভাগের অফিস থেকে বেশ দূরে। ওই এলাকায় বাঘসহ বন্য প্রাণীর উপস্থিতি অনেক বেশি। তাই মানুষের প্রবেশ কম। এ জন্য খবর পেতে দেরি হয়েছে।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশন মোংলার স্টেশন কর্মকর্তা মোহাম্মদ কায়মুজ্জামান বলেন, যেখানে আগুন লেগেছে, সেখান থেকে পানির দূরত্ব প্রায় দুই কিলোমিটার। যার কারণে আমরা এখন পর্যন্ত আগুন নির্বাপণের কাজ শুরু করতে পারিনি। সন্ধ্যা হওয়ায় আমরা ফিরে এসেছি। রবিবার (আজ) সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে বনের মধ্যে প্রবেশ করে আগুন নেভানোর কাজ শুরু করব।’
মোহাম্মদ কায়মুজ্জামান বলেন, বনের ভেতর প্রচুর পরিমাণ গাছের শুকনো পাতা রয়েছে, যার কারণে আগুনটা বাতাসে বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বর্তমানে ওই এলাকায় কালো ধোঁয়া দেখা যাচ্ছে। তবে আগুন নতুন এলাকায় ছড়িয়ে যাতে না পড়ে সে বিষয়ে খেয়াল রাখা হচ্ছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, আগুন জ¦লতে থাকা এলাকায় বানর ও বনমোরগ ছোটাছুটি করতে দেখা গেছে। আগুন লাগা এলাকায় মূলত বলা, সুন্দরি, বাইন, গেওয়া, জিন, সিংড়াসহ বিভিন্ন ধরনের লতাগুল্মজাতীয় গাছ বেশি। এরই মধ্যে বেশ কিছু বলা বন পুড়ে গেছে।
বাগেরহাট পূর্ব সুন্দরবন বন বিভাগের তথ্যানুযায়ী, সুন্দরবনে ২০০২ সালে শরণখোলা রেঞ্জের কটকা অভয়ারণ্য এলাকায়, ২০০৪ সালে চাঁদপাই রেঞ্জের ধানসাগর স্টেশনের নাংলী ক্যাম্প ও আড়ুয়াবের খালে, ২০০৫ সালে চাঁদপাই রেঞ্জের আড়ুয়াবের খালের পশ্চিমে তুলাতলা ও খুটাবাড়ি এলাকায় আগুন লাগে। এরপর ২০০৬ সালে তেরাবেকা খালের পাড়ে, আমুরবুনিয়া, কলমতেজিয়া, পচাকুড়ালিয়া বিল ও ধানসাগর স্টেশন এলাকায় পাঁচটি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। ২০০৭ সালে বলেশ্বর নদীর তীরবর্তী নলবন, পচাকুড়ালিয়া বিলে আগুন লাগার ঘটনা ঘটে। ২০১০ সালে ধানসাগর স্টেশনের গুলিশাখালী, ২০১১ সালে ধানসাগর স্টেশনের নাংলী, ২০১৪ সালে আবারও ধানসাগর স্টেশনসংলগ্ন বনে অগ্নিকাণ্ড হয়। ২০১৬ সালেও ধানসাগর স্টেশনের নাংলী, পচাকুড়ালিয়া, তুলাতলী এবং ২০১৭ সালে একই স্টেশনের মাদরাসার ছিলা নামক স্থানে আগুন লাগার ঘটনা ঘটে। এসব বড় ঘটনা ছাড়াও ছোটখাটো অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা প্রায়ই শোনা যায়।