Dhaka 5:30 pm, Saturday, 18 May 2024

লাশ চুরির ভয়ে দল বেঁধে রাত জেগে কবর পাহাড়া

গাইবান্ধার বল্লমঝাড় ইউনিয়নের দক্ষিণ কুমরপুর গ্রামে নিহতের ঘটনায় থানায় মামলা না নেয়ায় ওই গ্রামের অধিবাসীরা নিহতের লাশ কবর থেকে উত্তোলন ও ময়না তদন্তের দাবিতে দল বেঁধে কবর পাহাড়া দিচ্ছে। এ বিষয়ে শনিবার গাইবান্ধা প্রেসক্লাবে নিহতের স্বজন ও ওই গ্রামের অধিবাসীরা এক সংবাদ সম্মেলনে হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেফতার ও থানায় মামলা নেয়ার দাবি জানান। 
সংবাদ সম্মেলনে নিহতের বড় ভাই মোশারফ হোসেন লিখিত বক্তব্যে উল্লেখ করেন, সদর উপজেলার দক্ষিণ কুমরপুর গ্রামের আকবর আলীর ছেলে অনার্স ৩য় বর্ষের ছাত্র সাদিক হোসেনকে (ব্যবস্থাপনা) পূর্ব পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনায় থানায় মামলা নিতে গড়িমসি করে হত্যাকান্ডকে ভিন্ন খাতে প্রবাহের চেষ্টা করা হচ্ছিল। পরে থানা পুলিশের চাপে লাশ ময়না তদন্ত ছাড়াই ওই গ্রামে দাফন করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, গত ১৯ মার্চ বিকেল ৪টার দিকে একই উপজেলার পার্শ্ববর্তী ফুলবাড়ি গ্রামের মো. আকাশ ও তার পিতা সাজু মিয়া তাদের বাড়িতে সাদিক হোসেনকে বেড়ানোর কথা বলে তাদের ব্যবহৃত সুজকি মটর সাইকেলে করে নিয়ে যায়। এর এক ঘন্টা পর সাজু মিয়া বাড়িতে খবর দেয় সাঘাটা উপজেলার ভাঙ্গামোড় সাধুর আশ্রম নামে এলাকায় অজ্ঞাতনামা বেপরোয়াভাবে ট্রাক্টরের ধাক্কায় সাদিক ও আকাশ সড়ক দুর্ঘটনায় গুরুতরভাবে আহত হয়েছে। তাদের গাইবান্ধা সদর হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছে। খবর পেয়ে সাথে সাথেই পরিবারের লোকজনসহ সদর হাসপাতালে এসে সাদিককে আহত অবস্থায় হাসপাতালের সামনে অ্যাম্বুলেন্সে দেখতে পায়। এসময় সাজু মিয়া কৌশলে সাদিককে দ্রুত রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তির কথা বলে পলাশবাড়ি উপজেলায় নিয়ে গিয়ে চিকিৎসককে ডেকে নিয়ে তাকে মৃত ঘোষণা করেন। সাদিক সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছে ভেবে সাদিকের লাশ বাড়িতে নিয়ে গিয়ে দাফন করা হয়। পরে জানতে পারে সাজু মিয়ার ছেলে আকাশ আহতও হয়নি এবং মারাও যায়নি এবং তখন থেকেই সাজু মিয়া ও তার ছেলে আকাশ পলাতক রয়েছে। সড়ক দুর্ঘটনার কারণে ওই মটর সাইকেলটি ঘটনাস্থলের পাশে জনৈক সাইদুর রহমান সাঘাটা থানায় জমা দেয়।
পরে তার ভাই সাদিকের মৃত্যুর বিষয়টি সন্দেহজনক হওয়ায় প্রথমে গাইবান্ধা সদর থানায় মামলা করতে গেলে পুলিশ মামলা না নিয়ে সাঘাটায় থানায় পাঠায়। পরে সাঘাটা থানায় গেলে পুলিশ কোন মামলা না নিয়ে তাদেরকে নানাভাবে তালবাহানা করে। এদিকে নিহতের সাথে থাকা আকাশ মিয়া ও তার পিতা সাজু মিয়া আত্মগোপন করে। নিহতের পরিবার পুনরায় থানায় গিয়ে সাদিকের লাশ ময়না তদন্ত ও মামলা দায়ের করতে গেলে পুলিশ আদালতে মামলা দায়ের করার পরামর্শ দিয়ে তাদের বিদায় করে দেয়। অন্যদিকে সাজু মিয়া হত্যা মামলা না করার জন্য তার লোকজন দিয়ে নিহতের পরিবারকে হত্যা, গুম করাসহ নানাভাবে ভয়ভীতি প্রদর্শন ও কবর থেকে লাশ চুরি করার হুমকি দিয়ে আসছে। ফলে নিহতের পরিবার ও ওই গ্রামের অধিবাসীরা রাত জেগে সাদিকের কবর পাহাড়া দিচ্ছে। তাই সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপারের মাধ্যমে হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত আকাশ, সাজু মিয়াসহ দোষীদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি এবং থানায় হত্যা মামলা নিয়ে পিবিআই পুলিশকে তদন্তের দায়িত্ব দেয়ার দাবি জানান। সম্মেলনে বক্তব্য দেন নিহত সাদিকের মা জেলেখা বেগম, মামা আব্দুল জোব্বার, বড় ভাই জুয়েল মিয়া, রাশেদ মিয়া, মন্টু মিয়া, রুবেল মিয়া, লাখি বেগম, ছাত্তার মিয়া, নাসরিন বেগম প্রমুখ।

One thought on “লাশ চুরির ভয়ে দল বেঁধে রাত জেগে কবর পাহাড়া

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

আপডেট সংবাদ

লাশ চুরির ভয়ে দল বেঁধে রাত জেগে কবর পাহাড়া

Update Time : 04:14:23 pm, Saturday, 4 May 2024
গাইবান্ধার বল্লমঝাড় ইউনিয়নের দক্ষিণ কুমরপুর গ্রামে নিহতের ঘটনায় থানায় মামলা না নেয়ায় ওই গ্রামের অধিবাসীরা নিহতের লাশ কবর থেকে উত্তোলন ও ময়না তদন্তের দাবিতে দল বেঁধে কবর পাহাড়া দিচ্ছে। এ বিষয়ে শনিবার গাইবান্ধা প্রেসক্লাবে নিহতের স্বজন ও ওই গ্রামের অধিবাসীরা এক সংবাদ সম্মেলনে হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেফতার ও থানায় মামলা নেয়ার দাবি জানান। 
আরো পড়ুন:গাইবান্ধায় গণ পরিষদের প্রথম স্পীকার শাহ আব্দুল হামিদের ৫২তম মৃত্যু বার্ষিকী পালিত
সংবাদ সম্মেলনে নিহতের বড় ভাই মোশারফ হোসেন লিখিত বক্তব্যে উল্লেখ করেন, সদর উপজেলার দক্ষিণ কুমরপুর গ্রামের আকবর আলীর ছেলে অনার্স ৩য় বর্ষের ছাত্র সাদিক হোসেনকে (ব্যবস্থাপনা) পূর্ব পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনায় থানায় মামলা নিতে গড়িমসি করে হত্যাকান্ডকে ভিন্ন খাতে প্রবাহের চেষ্টা করা হচ্ছিল। পরে থানা পুলিশের চাপে লাশ ময়না তদন্ত ছাড়াই ওই গ্রামে দাফন করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, গত ১৯ মার্চ বিকেল ৪টার দিকে একই উপজেলার পার্শ্ববর্তী ফুলবাড়ি গ্রামের মো. আকাশ ও তার পিতা সাজু মিয়া তাদের বাড়িতে সাদিক হোসেনকে বেড়ানোর কথা বলে তাদের ব্যবহৃত সুজকি মটর সাইকেলে করে নিয়ে যায়। এর এক ঘন্টা পর সাজু মিয়া বাড়িতে খবর দেয় সাঘাটা উপজেলার ভাঙ্গামোড় সাধুর আশ্রম নামে এলাকায় অজ্ঞাতনামা বেপরোয়াভাবে ট্রাক্টরের ধাক্কায় সাদিক ও আকাশ সড়ক দুর্ঘটনায় গুরুতরভাবে আহত হয়েছে। তাদের গাইবান্ধা সদর হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছে। খবর পেয়ে সাথে সাথেই পরিবারের লোকজনসহ সদর হাসপাতালে এসে সাদিককে আহত অবস্থায় হাসপাতালের সামনে অ্যাম্বুলেন্সে দেখতে পায়। এসময় সাজু মিয়া কৌশলে সাদিককে দ্রুত রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তির কথা বলে পলাশবাড়ি উপজেলায় নিয়ে গিয়ে চিকিৎসককে ডেকে নিয়ে তাকে মৃত ঘোষণা করেন। সাদিক সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছে ভেবে সাদিকের লাশ বাড়িতে নিয়ে গিয়ে দাফন করা হয়। পরে জানতে পারে সাজু মিয়ার ছেলে আকাশ আহতও হয়নি এবং মারাও যায়নি এবং তখন থেকেই সাজু মিয়া ও তার ছেলে আকাশ পলাতক রয়েছে। সড়ক দুর্ঘটনার কারণে ওই মটর সাইকেলটি ঘটনাস্থলের পাশে জনৈক সাইদুর রহমান সাঘাটা থানায় জমা দেয়।
আরো পড়ুন:গাইবান্ধায় মহান মে দিবস পালিত
পরে তার ভাই সাদিকের মৃত্যুর বিষয়টি সন্দেহজনক হওয়ায় প্রথমে গাইবান্ধা সদর থানায় মামলা করতে গেলে পুলিশ মামলা না নিয়ে সাঘাটায় থানায় পাঠায়। পরে সাঘাটা থানায় গেলে পুলিশ কোন মামলা না নিয়ে তাদেরকে নানাভাবে তালবাহানা করে। এদিকে নিহতের সাথে থাকা আকাশ মিয়া ও তার পিতা সাজু মিয়া আত্মগোপন করে। নিহতের পরিবার পুনরায় থানায় গিয়ে সাদিকের লাশ ময়না তদন্ত ও মামলা দায়ের করতে গেলে পুলিশ আদালতে মামলা দায়ের করার পরামর্শ দিয়ে তাদের বিদায় করে দেয়। অন্যদিকে সাজু মিয়া হত্যা মামলা না করার জন্য তার লোকজন দিয়ে নিহতের পরিবারকে হত্যা, গুম করাসহ নানাভাবে ভয়ভীতি প্রদর্শন ও কবর থেকে লাশ চুরি করার হুমকি দিয়ে আসছে। ফলে নিহতের পরিবার ও ওই গ্রামের অধিবাসীরা রাত জেগে সাদিকের কবর পাহাড়া দিচ্ছে। তাই সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপারের মাধ্যমে হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত আকাশ, সাজু মিয়াসহ দোষীদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি এবং থানায় হত্যা মামলা নিয়ে পিবিআই পুলিশকে তদন্তের দায়িত্ব দেয়ার দাবি জানান। সম্মেলনে বক্তব্য দেন নিহত সাদিকের মা জেলেখা বেগম, মামা আব্দুল জোব্বার, বড় ভাই জুয়েল মিয়া, রাশেদ মিয়া, মন্টু মিয়া, রুবেল মিয়া, লাখি বেগম, ছাত্তার মিয়া, নাসরিন বেগম প্রমুখ।