Dhaka 4:36 am, Thursday, 9 May 2024

ফুসফুস ক্যানসারের ক্ষেত্রে সচেতনতাই মূল হাতিয়ার

বিশ্বজুড়ে ক্যানসার আক্রান্তের হার বিবেচনায় ফুসফুস ক্যানসারের অবস্থান প্রথম সারিতে। আবার ক্যানসারজনিত মৃত্যুর প্রধানতম কারণও ফুসফুস ক্যানসার।

কারণ : ফুসফুস ক্যানসারের প্রধানতম কারণ ধূমপান। যারা ধূমপায়ীর কাছাকাছি থেকে পরোক্ষভাবে ধূমপান করেন, তারাও ঝুঁকিতে আছেন। অনেকের ধারণা, ভেইপ বা ই-সিগারেট নিরাপদ। গবেষণা বলছে, এগুলোর মধ্যে ফরম্যাল্ডিহাইড ও অ্যাক্রোলিনের মতো ক্যানসার সৃষ্টিকারী রাসায়নিক উপাদান রয়েছে। এছাড়া খনি শ্রমিক, নির্মাণ শ্রমিক, ঢালাই শ্রমিক, জাহাজ ভাঙা শিল্পের শ্রমিকসহ বায়ুদূষণ হয়Ñ এমন পরিবেশে যারা দীর্ঘক্ষণ থাকেন, তাদের ফুসফুস ক্যানসার হওয়ার আশঙ্কা অনেক বেশি।

লক্ষণ : দীর্ঘমেয়াদি কাশি, যা চিকিৎসায় ভালো হচ্ছে না, কাশির সঙ্গে রক্ত যাওয়া, বুকব্যথা, শ্বাসকষ্ট- এসব ফুসফুস ক্যানসারের প্রাথমিক লক্ষণ। পাশাপাশি সব ক্যানসারের মতো এ ক্যানসারেও রক্তস্বল্পতা, ওজন হ্রাস ও অরুচির মতো উপসর্গ থাকে। রোগটি মস্তিষ্কে ছড়িয়ে পড়লে মাথাব্যথা, চোখে ঝাপসা দেখা, খিঁচুনি ও রোগী অসংলগ্ন কথাবার্তা বলতে পারেন। ক্যানসারের কোষ হাড়ে বাসা বাঁধলে রোগী বেশি ব্যথার কথা বলতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে হাড় ভেঙেও যেতে পারে। রোগটি যকৃতে (লিভার) ছড়িয়ে পরলে ক্ষুধামন্দা, বমিভাব, পেটব্যথা, ত্বক ও চোখ হলুদাভ (জন্ডিস) হতে পারে।

রোগ নির্ণয় : উপসর্গগুলো নিয়ে কোনো রোগী এলে শুরুতেই বুকের এক্স-রে করা হয়। টিউমারের উপস্থিতি থাকলে সিটি স্ক্যান করে তার আকার, অবস্থান ও বিস্তার সম্পর্কে সম্যক ধারণা নেওয়া হয়। পরে বায়োপসি ও হিস্টোপ্যাথলজি করা হয়। প্রযোজ্য ক্ষেত্রে ইম্যিউনোহিস্টোকেমিস্ট্রিও করা হয়। এ পরীক্ষাগুলোর মাধ্যমে ফুসফুস ক্যানসার আছে কিনা, তা নিশ্চিত হওয়া যায়। এটি কী ধরনের ফুসফুস ক্যানসার, তাও জানা যায়। একেক ধরনের ফুসফুস ক্যানসারের জন্য চিকিৎসা পদ্ধতি একেক রকম। এটি কোন স্টেজ বা পর্যায়ে আছে, তা জানতে পেট সিটি স্ক্যান, মস্তিষ্কের এমআরআই করা হয়। চিকিৎসা শুরুর আগে কিডনি, লিভার, হার্ট, লাং (ফুসফুস) ভালো আছে কিনা, তা রক্ত পরীক্ষাসহ বিভিন্ন পরীক্ষা করে নিশ্চিত হয়ে নেওয়া হয়।

চিকিৎসা : চিকিৎসা পদ্ধতি পাঁচ ভাগে বিভক্ত। যেমন- ১. সার্জারি; ২. রেডিওথেরাপি; ৩. কেমোথেরাপি; ৪. টার্গেটেড থেরাপি ও ইম্যুউনোথেরাপি; ৫. প্যালিয়েটিভ কেয়ার। ক্যানসারটি কোন স্টেজে আছে এবং চিকিৎসা গ্রহণে রোগীর শারীরিক সক্ষমতা কেমন, তার ওপর ভিত্তি করে কী চিকিৎসা লাগবে এবং তার ক্রম কেমন হবে, তা নির্ধারণ করা হয়। বেশির ভাগ রোগীকে একাধিক চিকিৎসা পদ্ধতি গ্রহণ করতে হয়। ইতিবাচক দিক হলো, ফুসফুস ক্যানসার নির্ণয় ও এর সব চিকিৎসাপদ্ধতি বাংলাদেশের সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে বিদ্যমান; সহজলভ্যও। ফুসফুস ক্যানসারের চিকিৎসা দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া। চিকিৎসা শেষ হওয়ার পর আবার ফিরে আসতে পারে। তাই রোগীকে নিয়মমাফিক ফলোআপে থাকতে হয়। ফুসফুস ক্যানসারের প্রকোপ কমাতে ধূমপান এবং পরিবেশদূষণের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। নিজে সচেতন হোন। অন্যকে সচেতন করুন। সবাই মিলে সুস্থ থাকুন।

লেখক : ক্যানসার বিশেষজ্ঞ

ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

আপডেট সংবাদ

ফুসফুস ক্যানসারের ক্ষেত্রে সচেতনতাই মূল হাতিয়ার

Update Time : 11:07:16 am, Saturday, 27 April 2024

বিশ্বজুড়ে ক্যানসার আক্রান্তের হার বিবেচনায় ফুসফুস ক্যানসারের অবস্থান প্রথম সারিতে। আবার ক্যানসারজনিত মৃত্যুর প্রধানতম কারণও ফুসফুস ক্যানসার।

কারণ : ফুসফুস ক্যানসারের প্রধানতম কারণ ধূমপান। যারা ধূমপায়ীর কাছাকাছি থেকে পরোক্ষভাবে ধূমপান করেন, তারাও ঝুঁকিতে আছেন। অনেকের ধারণা, ভেইপ বা ই-সিগারেট নিরাপদ। গবেষণা বলছে, এগুলোর মধ্যে ফরম্যাল্ডিহাইড ও অ্যাক্রোলিনের মতো ক্যানসার সৃষ্টিকারী রাসায়নিক উপাদান রয়েছে। এছাড়া খনি শ্রমিক, নির্মাণ শ্রমিক, ঢালাই শ্রমিক, জাহাজ ভাঙা শিল্পের শ্রমিকসহ বায়ুদূষণ হয়Ñ এমন পরিবেশে যারা দীর্ঘক্ষণ থাকেন, তাদের ফুসফুস ক্যানসার হওয়ার আশঙ্কা অনেক বেশি।

লক্ষণ : দীর্ঘমেয়াদি কাশি, যা চিকিৎসায় ভালো হচ্ছে না, কাশির সঙ্গে রক্ত যাওয়া, বুকব্যথা, শ্বাসকষ্ট- এসব ফুসফুস ক্যানসারের প্রাথমিক লক্ষণ। পাশাপাশি সব ক্যানসারের মতো এ ক্যানসারেও রক্তস্বল্পতা, ওজন হ্রাস ও অরুচির মতো উপসর্গ থাকে। রোগটি মস্তিষ্কে ছড়িয়ে পড়লে মাথাব্যথা, চোখে ঝাপসা দেখা, খিঁচুনি ও রোগী অসংলগ্ন কথাবার্তা বলতে পারেন। ক্যানসারের কোষ হাড়ে বাসা বাঁধলে রোগী বেশি ব্যথার কথা বলতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে হাড় ভেঙেও যেতে পারে। রোগটি যকৃতে (লিভার) ছড়িয়ে পরলে ক্ষুধামন্দা, বমিভাব, পেটব্যথা, ত্বক ও চোখ হলুদাভ (জন্ডিস) হতে পারে।

রোগ নির্ণয় : উপসর্গগুলো নিয়ে কোনো রোগী এলে শুরুতেই বুকের এক্স-রে করা হয়। টিউমারের উপস্থিতি থাকলে সিটি স্ক্যান করে তার আকার, অবস্থান ও বিস্তার সম্পর্কে সম্যক ধারণা নেওয়া হয়। পরে বায়োপসি ও হিস্টোপ্যাথলজি করা হয়। প্রযোজ্য ক্ষেত্রে ইম্যিউনোহিস্টোকেমিস্ট্রিও করা হয়। এ পরীক্ষাগুলোর মাধ্যমে ফুসফুস ক্যানসার আছে কিনা, তা নিশ্চিত হওয়া যায়। এটি কী ধরনের ফুসফুস ক্যানসার, তাও জানা যায়। একেক ধরনের ফুসফুস ক্যানসারের জন্য চিকিৎসা পদ্ধতি একেক রকম। এটি কোন স্টেজ বা পর্যায়ে আছে, তা জানতে পেট সিটি স্ক্যান, মস্তিষ্কের এমআরআই করা হয়। চিকিৎসা শুরুর আগে কিডনি, লিভার, হার্ট, লাং (ফুসফুস) ভালো আছে কিনা, তা রক্ত পরীক্ষাসহ বিভিন্ন পরীক্ষা করে নিশ্চিত হয়ে নেওয়া হয়।

চিকিৎসা : চিকিৎসা পদ্ধতি পাঁচ ভাগে বিভক্ত। যেমন- ১. সার্জারি; ২. রেডিওথেরাপি; ৩. কেমোথেরাপি; ৪. টার্গেটেড থেরাপি ও ইম্যুউনোথেরাপি; ৫. প্যালিয়েটিভ কেয়ার। ক্যানসারটি কোন স্টেজে আছে এবং চিকিৎসা গ্রহণে রোগীর শারীরিক সক্ষমতা কেমন, তার ওপর ভিত্তি করে কী চিকিৎসা লাগবে এবং তার ক্রম কেমন হবে, তা নির্ধারণ করা হয়। বেশির ভাগ রোগীকে একাধিক চিকিৎসা পদ্ধতি গ্রহণ করতে হয়। ইতিবাচক দিক হলো, ফুসফুস ক্যানসার নির্ণয় ও এর সব চিকিৎসাপদ্ধতি বাংলাদেশের সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে বিদ্যমান; সহজলভ্যও। ফুসফুস ক্যানসারের চিকিৎসা দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া। চিকিৎসা শেষ হওয়ার পর আবার ফিরে আসতে পারে। তাই রোগীকে নিয়মমাফিক ফলোআপে থাকতে হয়। ফুসফুস ক্যানসারের প্রকোপ কমাতে ধূমপান এবং পরিবেশদূষণের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। নিজে সচেতন হোন। অন্যকে সচেতন করুন। সবাই মিলে সুস্থ থাকুন।

লেখক : ক্যানসার বিশেষজ্ঞ

ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল