Dhaka 6:43 am, Monday, 20 May 2024

আরও এক মামলায় খালাস পেলেন ‘গোল্ডেন মনির’

অস্ত্র মামলায় খালাস পাওয়ার পর স্বর্ণ চোরাচালানের মামলাতেও বেকসুর খালাস পেলেন আলোচিত মনির হোসেন ওরফে গোল্ডেন মনির। গতকাল রবিবার ঢাকার সপ্তম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক তেহসিন ইফতেখার এ খালাসের রায় ঘোষণা করেছেন। যা আজ সোমবার জানা গেছে।

সংশ্লিষ্ট আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের প্রসিকিউটর মাহবুবুর রহমান খালাসের বিষয়ে জানিয়েছেন, সাক্ষীদের সাক্ষ্যে মিল ছিল না। এ কারণেই মূলত আদালত আসামিকে খালাস দিয়েছেন। আপিলের বিষয়ে রায়ের পূর্ণাঙ্গ কপি হাতে পাওয়ার পর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

এর আগে গত ফেব্রুয়ারি মাসে ঢাকার তৎকালীন মহানগর দায়রা জজ মো. আছাদুজ্জামান অস্ত্র মামলায় রায়ে এ আসামিকে বেকসুর খালাস প্রদান করেন।

রাজধানীর মেরুল বাড্ডার বাসায় ২০২০ সালের ২০ নভেম্বর অভিযান চালিয়ে মনিরকে আটক করে র‌্যাব। এ সময় একটি বিদেশি পিস্তল, চার লিটার বিদেশি মদ, ৩২টি নকল সিল, ৮ লাখ টাকার বেশি মূল্যমানের বৈদেশিক মুদ্রা, ৬০০ ভরি স্বর্ণালংকার ও ১ কোটি ৯ লাখ টাকা জব্দ করার কথা জানানো হয় হয়। এ ঘটনায় অস্ত্র আইনসহ বাড্ডা থানায় পৃথক তিনটি মামলা করেছিল র‌্যাব। যার মধ্যে সোনা চেরাচালান মামলাটি ২০২০ সালের ২২ নভেম্বর ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলাটি দায়ের করে বাহিনীটি। তদন্ত শেষে ২০২১ সালের ১২ জুলাই তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক (ডিবি) আব্দুল মালেক চার্জশিট দাখিল করেন

আরও পড়ুন:বিএনপি নেতা আমানকে বিদেশ যাওয়ার অনুমতি দিলেন আদালত

চার্জশিটে বলা হয়, অভিযুক্ত মনির হোসেন সাড়ে সাত কেজি অবৈধ স্বর্ণ, ৬২ লাখ ৫০ হাজার টাকা ও বিপুল পরিমাণ বিদেশি মুদ্রা পাচারের উদ্দেশ্য নিজ হেফাজতে রেখেছেন। উদ্ধার হওয়া স্বর্ণ কর ফাঁকি দিয়ে অবৈধ পথে দেশে আনা হয়।

আদালত রায় পর্যালোচনায় বলেন, চার্জশিটের ১০ থেকে ১৪ নম্বর সাক্ষীরা ঘটনাস্থল (গোল্ডেন মনিরের বাড়ি) থেকে আলামত উদ্ধার হতে দেখেননি। তারা সবাই র‌্যারের চাপাচাপিতে সাদা কাগজে স্বাক্ষর করতে বাধ্য হন। অর্থাৎ নিরপেক্ষ পাঁচজন সাক্ষীই রাষ্ট্রপক্ষের বক্তব্যকে সমর্থন করেনি।

এ ছাড়া জব্দকৃত আলামতসমূহ তথা স্বর্ণালঙ্কার বৈধ আয় দিয়ে খরিদকৃত, যা ট্যাক্স ফাইলে দেখানো আছে। এসব মালামালের জন্য তিনি কর প্রদান করে থাকেন। তাই রাষ্ট্রপক্ষ এবং অভিযুক্তপক্ষের সাক্ষীদের সাক্ষ্য এবং আদালতে উপস্থাপিত দাখিলিক প্রমাণ স্পষ্টতই এজাহার এবং রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষীদের বক্তব্যের সত্যতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে।

মানিলন্ডারিং মামলার কাগজপত্রের তথ্য বলছে, গোল্ডেন মনির ও তার স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের নামে থাকা ১২৯টি ব্যাংক হিসাবে ৭৯১ কোটি ৫ লাখ ৯৬ হাজার ৫২৩ টাকা জমা করা হয়। মনির এ আয়ের একটি অংশ সংঘবদ্ধ অপরাধী চক্রের সদস্যদের যোগসাজশে যৌথ ও একক নামে ব্যবসায় বিনিয়োগ করে স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তিতে রূপান্তর করেছেন।

মনিরকে আটক করার পর র‌্যাবের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, নব্বইয়ের দশকে গাউছিয়া মার্কেটে কাপড়ের দোকানের বিক্রয়কর্মী ছিলেন মনির। পরে মৌচাক মার্কেটের ক্রোকারিজের দোকানে চাকরি নেন। এরপর তিনি বিমানবন্দরকেন্দ্রিক লাগেজ পার্টি ও স্বর্ণ চোরাচালানে জড়িয়ে পড়েন। পরিচিতি পান ‘গোল্ডেন মনির’ নামে। বিক্রয়কর্মী থেকে লাগেজ পার্টিতে যোগ দেওয়ার পর মনির শুরুতে কর ফাঁকি দিয়ে কাপড়, প্রসাধনী, ইলেকট্রনিক পণ্য, কম্পিউটারসামগ্রীসহ বিভিন্ন মালামাল আনা-নেওয়া করতেন। একপর্যায়ে আকাশপথে স্বর্ণ চোরাচালানে জড়িয়ে পড়েন।

সিআইডির তথ্য বলছে, অপরাধলব্ধ আয় দিয়ে গোল্ডেন মনির স্ত্রী, ছেলে ও নিজের নামে সরকারি ২০টিসহ ৩০টি প্লট, ১৫টি বাড়ি, একটি আবাসন প্রতিষ্ঠান ও দুটি গাড়ির শো-রুম করেছেন। অথচ মনির ২০০৯ সালে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কাছে দাখিল করা সম্পদের হিসাব বিবরণীতে উল্লেখ করেছিলেন, তার স্থাবর সম্পদের পরিমাণ ৩ কোটি টাকা। আর অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ ৬৭ লাখ টাকা।

One thought on “আরও এক মামলায় খালাস পেলেন ‘গোল্ডেন মনির’

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

আপডেট সংবাদ

আরও এক মামলায় খালাস পেলেন ‘গোল্ডেন মনির’

Update Time : 11:19:28 am, Tuesday, 7 May 2024

অস্ত্র মামলায় খালাস পাওয়ার পর স্বর্ণ চোরাচালানের মামলাতেও বেকসুর খালাস পেলেন আলোচিত মনির হোসেন ওরফে গোল্ডেন মনির। গতকাল রবিবার ঢাকার সপ্তম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক তেহসিন ইফতেখার এ খালাসের রায় ঘোষণা করেছেন। যা আজ সোমবার জানা গেছে।

সংশ্লিষ্ট আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের প্রসিকিউটর মাহবুবুর রহমান খালাসের বিষয়ে জানিয়েছেন, সাক্ষীদের সাক্ষ্যে মিল ছিল না। এ কারণেই মূলত আদালত আসামিকে খালাস দিয়েছেন। আপিলের বিষয়ে রায়ের পূর্ণাঙ্গ কপি হাতে পাওয়ার পর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

এর আগে গত ফেব্রুয়ারি মাসে ঢাকার তৎকালীন মহানগর দায়রা জজ মো. আছাদুজ্জামান অস্ত্র মামলায় রায়ে এ আসামিকে বেকসুর খালাস প্রদান করেন।

রাজধানীর মেরুল বাড্ডার বাসায় ২০২০ সালের ২০ নভেম্বর অভিযান চালিয়ে মনিরকে আটক করে র‌্যাব। এ সময় একটি বিদেশি পিস্তল, চার লিটার বিদেশি মদ, ৩২টি নকল সিল, ৮ লাখ টাকার বেশি মূল্যমানের বৈদেশিক মুদ্রা, ৬০০ ভরি স্বর্ণালংকার ও ১ কোটি ৯ লাখ টাকা জব্দ করার কথা জানানো হয় হয়। এ ঘটনায় অস্ত্র আইনসহ বাড্ডা থানায় পৃথক তিনটি মামলা করেছিল র‌্যাব। যার মধ্যে সোনা চেরাচালান মামলাটি ২০২০ সালের ২২ নভেম্বর ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলাটি দায়ের করে বাহিনীটি। তদন্ত শেষে ২০২১ সালের ১২ জুলাই তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক (ডিবি) আব্দুল মালেক চার্জশিট দাখিল করেন

আরও পড়ুন:বিএনপি নেতা আমানকে বিদেশ যাওয়ার অনুমতি দিলেন আদালত

চার্জশিটে বলা হয়, অভিযুক্ত মনির হোসেন সাড়ে সাত কেজি অবৈধ স্বর্ণ, ৬২ লাখ ৫০ হাজার টাকা ও বিপুল পরিমাণ বিদেশি মুদ্রা পাচারের উদ্দেশ্য নিজ হেফাজতে রেখেছেন। উদ্ধার হওয়া স্বর্ণ কর ফাঁকি দিয়ে অবৈধ পথে দেশে আনা হয়।

আদালত রায় পর্যালোচনায় বলেন, চার্জশিটের ১০ থেকে ১৪ নম্বর সাক্ষীরা ঘটনাস্থল (গোল্ডেন মনিরের বাড়ি) থেকে আলামত উদ্ধার হতে দেখেননি। তারা সবাই র‌্যারের চাপাচাপিতে সাদা কাগজে স্বাক্ষর করতে বাধ্য হন। অর্থাৎ নিরপেক্ষ পাঁচজন সাক্ষীই রাষ্ট্রপক্ষের বক্তব্যকে সমর্থন করেনি।

এ ছাড়া জব্দকৃত আলামতসমূহ তথা স্বর্ণালঙ্কার বৈধ আয় দিয়ে খরিদকৃত, যা ট্যাক্স ফাইলে দেখানো আছে। এসব মালামালের জন্য তিনি কর প্রদান করে থাকেন। তাই রাষ্ট্রপক্ষ এবং অভিযুক্তপক্ষের সাক্ষীদের সাক্ষ্য এবং আদালতে উপস্থাপিত দাখিলিক প্রমাণ স্পষ্টতই এজাহার এবং রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষীদের বক্তব্যের সত্যতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে।

মানিলন্ডারিং মামলার কাগজপত্রের তথ্য বলছে, গোল্ডেন মনির ও তার স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের নামে থাকা ১২৯টি ব্যাংক হিসাবে ৭৯১ কোটি ৫ লাখ ৯৬ হাজার ৫২৩ টাকা জমা করা হয়। মনির এ আয়ের একটি অংশ সংঘবদ্ধ অপরাধী চক্রের সদস্যদের যোগসাজশে যৌথ ও একক নামে ব্যবসায় বিনিয়োগ করে স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তিতে রূপান্তর করেছেন।

মনিরকে আটক করার পর র‌্যাবের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, নব্বইয়ের দশকে গাউছিয়া মার্কেটে কাপড়ের দোকানের বিক্রয়কর্মী ছিলেন মনির। পরে মৌচাক মার্কেটের ক্রোকারিজের দোকানে চাকরি নেন। এরপর তিনি বিমানবন্দরকেন্দ্রিক লাগেজ পার্টি ও স্বর্ণ চোরাচালানে জড়িয়ে পড়েন। পরিচিতি পান ‘গোল্ডেন মনির’ নামে। বিক্রয়কর্মী থেকে লাগেজ পার্টিতে যোগ দেওয়ার পর মনির শুরুতে কর ফাঁকি দিয়ে কাপড়, প্রসাধনী, ইলেকট্রনিক পণ্য, কম্পিউটারসামগ্রীসহ বিভিন্ন মালামাল আনা-নেওয়া করতেন। একপর্যায়ে আকাশপথে স্বর্ণ চোরাচালানে জড়িয়ে পড়েন।

সিআইডির তথ্য বলছে, অপরাধলব্ধ আয় দিয়ে গোল্ডেন মনির স্ত্রী, ছেলে ও নিজের নামে সরকারি ২০টিসহ ৩০টি প্লট, ১৫টি বাড়ি, একটি আবাসন প্রতিষ্ঠান ও দুটি গাড়ির শো-রুম করেছেন। অথচ মনির ২০০৯ সালে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কাছে দাখিল করা সম্পদের হিসাব বিবরণীতে উল্লেখ করেছিলেন, তার স্থাবর সম্পদের পরিমাণ ৩ কোটি টাকা। আর অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ ৬৭ লাখ টাকা।