Dhaka 1:43 pm, Saturday, 18 May 2024

চট্টগ্রামে ভাষার মাসে অমর একুশে বই মেলা শুরু

চট্টগ্রাম নগরীর সিআরবি শিরীষতলা প্রাঙ্গণে ৯ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার থেকে শুরু হচ্ছে অমর একুশে বইমেলা ২০২৪। ২৩ দিনব্যাপী বইমেলাকে কেন্দ্র করে এরই মধ্যে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক)।চসিকের আয়োজনে ২০১৯ সাল থেকে সম্মিলিতভাবে চট্টগ্রামে ‘অমর একুশে বইমেলা’ হয়ে আসছে।তবে আমাদের এটাও মনে রাখতে হবে, মানুষের বইয়ের প্রতি আগ্রহ এবং ভালোবাসা আছে বলেই এ বইমেলা অনুষ্ঠিত হয়। নয়তো বইও বের হতো না, বইমেলাও সৃষ্টি হতো না। প্রতিবছরের ন্যায় এ বছরও বইমেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ঢাকায় বাংলা একাডেমির আয়োজিত বইমেলার পরেই বড় বইমেলা হচ্ছে চট্টগ্রামে। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন কর্তৃক আয়োজিত এই বইমেলায় সারাদেশের প্রকাশনীর উপস্থিত থাকবেন । এ ছাড়াও দেশের বিভিন্ন জেলায় দুই দিন, তিন দিন এবং সর্বোচ্চ সাত দিন পর্যন্ত খণ্ড খণ্ড বইমেলার আয়োজন করবে। গত বৃহস্পতিবার  (১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪)থেকে শুরু  ভাষার মাস ফেব্রুয়ারি। 
রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি ঢাকার রাজপথে যারা জীবন উৎসর্গ করেছিলেন, তাদের অমলিন স্মৃতি স্মরণের মাস ফেব্রুয়ারি।
বাঙালির কাছে এই মাস ভাষার মাস, দেশপ্রেমে উজ্জীবিত হওয়ার মাস। তাই তো বাঙালি জাতি নানা আয়োজনের মাধ্যমে পুরো ফেব্রুয়ারি মাসজুড়ে ভালোবাসা জানাবে ভাষা শহীদদের প্রতি।
> বইমেলার পরিধি ও বিন্যাস
৯২টি প্রকাশনা সংস্থার অংশগ্রহণে চট্টগ্রামে শুরু হতে যাচ্ছে অমর একুশে বইমেলা।শুক্রবার থেকে এ মেলা শুরু হয়ে চলবে ২ মার্চ পর্যন্ত। নগরের সিআরবি শিরীষতলায় ৪৩ হাজার বর্গফুট জায়গায় আয়োজিত এ মেলায় ১৫৫টি স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। প্রতিদিন বেলা ৩টা থেকে রাত ৯টা এবং ছুটির দিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত মেলায় প্রবেশ করা যাবে।
গত বুধবার ০৭ ফেব্রুয়ারি দুপুরে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) উদ্যোগে মেলা উপলক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে চসিক মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, ‘ভাষার মাসে বইমেলা আয়োজন করা হচ্ছে, যা চট্টগ্রামবাসীর দীর্ঘদিনের চাওয়া। আমরা সিআরবিতে মাসব্যাপী বইমেলা আয়োজনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আশা করছি এই বইমেলাটি লেখক, পাঠক-প্রকাশকদেরও উৎসাহিত করবে। সৃজনশীল, মননশীল, বিজ্ঞানমনস্ক প্রজন্ম গড়তে বই বড় ভূমিকা রাখবে।’ মাসব্যাপী বইমেলার অনুষ্ঠানমালায় রয়েছে ররীন্দ্র উৎসব, নজরুল উৎসব, লেখক সমাবেশ, যুব উৎসব, শিশু উৎসব, মুক্তিযুদ্ধ উৎসব, ছড়া উৎসব, কবিতা উৎসব, মাতৃভাষা দিবস ২১ ফেব্রুয়ারির আলোচনা, লোক উৎসব, তারুণ্য উৎসব, নারী উৎসব, বসন্ত উৎসব, মরমী উৎসব, আবৃত্তি উৎসব, নৃগোষ্ঠী উৎসব, পেশাজীবী সমাবেশ, কুইজ প্রতিযোগিতা, চাটগাঁ উৎসব, স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ও আলোকচিত্র প্রদর্শনী, বইমেলার সমাপনী ও পুরস্কার বিতরণের আয়োজন। এ ছাড়া মেলা মঞ্চে প্রতিদিন শিশু-কিশোরদের চিত্রাঙ্কন, রবীন্দ্র-নজরুলসংগীত, লোকসংগীত, সাধারণ নৃত্য, লোকনৃত্য, আবৃত্তি, উপস্থিত বক্তৃতা, দেশের গানের আয়োজন করা হবে। মেলাকে আকর্ষণীয় করার লক্ষ্যে চট্টগ্রামের লেখক, সাহিত্যিক, সংস্কৃতিকর্মী ও বইপ্রেমীদের নিয়ে বিভিন্ন উপপরিষদ গঠন করা হয়েছে।
মেলার সার্বিক নিরাপত্তার জন্য বেসরকারি পেশাদার একটি নিরাপত্তা সংস্থা সার্বক্ষণিক নিয়োজিত থাকবে। এ ছাড়া পুলিশের পক্ষ থেকে সার্বক্ষণিক নিরাপত্তাব্যবস্থা করা হয়েছে। গোটা মেলা সিসিটিভির আওতায় থাকবে। মেলার নিরাপত্তার জন্য শিরীষতলার পাশের রাস্তাটিও বন্ধ রাখা হবে।আজকাল আমরা বইপড়া প্রায় ভুলে যেতে বসেছি। বই পড়ার দিকে আমাদের যতটা না মনোযোগ, তার চেয়ে অনেক বেশি আগ্রহ ফেসবুকের প্রতি। ফেসবুক, ইউটিউব, ইন্টারনেট আর মোবাইলের নেশায় আমরা প্রকৃত বইপড়ার আনন্দটাই ভুলে যেতে বসেছি। বই হতে পারে উপহারের একটি উপকরণ। সেটাও যেন বিলীন হতে বসেছে। প্রিয়জনকে বেশি বেশি বই উপহার দিলে, নিজে বই কিনলে এবং নিয়মিত বই পড়লে, বইকে নিত্যসঙ্গী করতে পারলে যেমন নিজের জ্ঞানের পরিধি বাড়ে, তেমনি সুস্থ, সুন্দর জীবনযাপন করা যায়। বই হল প্রকৃত বন্ধু, বই হল বিপদের বন্ধু- যাকে সবসময় কাছে পাওয়া যায়।
আজ সমাজে যত অপকর্ম, অন্যায়-অবিচার, ব্যভিচার, অনৈতিক কর্মকাণ্ড- সবকিছুর মূল হল জ্ঞানহীন, মূল্যবোধহীন সমাজব্যবস্থা। এর প্রধান কারণ হল বই থেকে, জ্ঞানীগুণী ব্যক্তি থেকে বিচ্ছিন্ন জীবনযাপন। দেশি-বিদেশি অসংখ্য টেলিভিশন চ্যানেল বিনোদনের নামে আমাদের অনেক কর্মঘণ্টা কেড়ে নিচ্ছে। অথচ বিনোদনের এ আনন্দটুকু আমরা নির্ভেজালভাবে অনায়াসেই নিতে পারি বই পড়ার মাধ্যমে
> বই যে আমার প্রিয় বন্ধুঃ-
এই মানব জীবনে সবচেয়ে বড় সম্পদ হলো বই।বই আমার সবচেয়ে প্রিয় বন্ধু। ‘বন্ধু’ শব্দটি কতই মধুর! বন্ধুত্ব নৈকট্যের পরিচয়বাহী, সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতি, ভালোবাসা ও হৃদ্যতা এবং পারস্পরিক সুসম্পর্ক ও মানসিক বন্ধনের প্রতীক। বন্ধুত্বের ফাটল বেদনাদায়ক হলেও অস্বাভাবিক নয়; যখন তখন লক্ষণীয়। অনেকে আজ বন্ধু কাল শত্রু। বন্ধু হয়ে বেঈমানি আর বিশ্বাসঘাতকতা কারো কাম্য নয়। কিন্তু অপ্রত্যাশিত হলেও অহরহ ঘটছে। শুধু বন্ধু কেন পারস্পরিক স্বার্থের দ্বন্দ্বে বাবা-মা, ভাইবোন, নিকট আত্মীয়স্বজন ও পাড়া প্রতিবেশীদের মধ্যে সৃষ্টি হচ্ছে দূরত্ব। ছড়িয়ে পড়ছে হিংসা হানাহানি। পিপীলিকা যেমন বিপদে পানিতে পতিত গাছের পাতাকে বাঁচার অবলম্বন করে নেয়, তেমনি মানুষও বিপদ হতে বাঁচতে চায়, একটু আশ্রয় খোঁজে। প্রয়োজন হয় ভালো বন্ধুর। রক্ত মাংসে গড়া মানুষকে যেখানে বন্ধু হিসেবে ভেবেও সন্দেহ হয়, বিশ্বাস-অবিশ্বাসের দোলাচল কাজ করে, সেখানে মানুষের প্রকৃত বন্ধু হতে পারে বই।আর পড়তে শেখার পর থেকেই বিভিন্ন গল্পের বই পড়তে শুরু করি। খুবই ভালো লাগতো গল্পের বই পড়তে। কখনও বা অভিনয় করে পড়তাম।ছোটবেলা থেকেই খুব বই পড়তে ভালোবাসি। যে বইটা পড়তে শুরু করি সেটা শেষ না করলে ভালোই লাগেনা। আর সেই ছোট কাল থেকেই বইয়ের প্রতি আমার আকর্ষণ রয়েছে। পাঠ্য বইয়ের পাশাপাশি বিভিন্ন বই পড়ি।কেউ যদি আমাকে বই উপহার দেয় তাহলে আমি খুব খুশি হই। বই উপহার পাওয়ার মধ্যে যে আনন্দ আছে তা অন্য কিছুতে নেই। আর এসএসসি পরীক্ষার পর অবসরে প্রচুর বই পড়েছি আমি। আমি জানি এগুলো আমাকে কীভাবে সমৃদ্ধ করেছে।আর বই পড়ে মানুষ অজানাকে জানতে পারে অচেনাকে চিনতে পারে।
তাই বই বিশ্বাসের অঙ্গ জীবন যুদ্ধের হাতিয়ার। বই আমাদেরকে অন্ধকার থেকে বের করে এনে আলোর দিকে নিয়ে আসে।বই অন্ধকার দূর করে সভ্যতার অগ্রগতি ঘটায়। তাই বই যেমন সভ্যতার রক্ষাকবচ তেমন সভ্যতার চাবিকাঠি। সভ্যতার আদি লগ্ন থেকে বই অতীত ও বর্তমানের বহুমুখী জ্ঞান সম্পদকে বহন করে চলেছে।
> পাঠাগার ভান্ডারঃ-
বই পড়া সকল দেশের মানুষের কাছে একটি শখের বিষয়। বিভিন্ন রুচির মানুষ তাদের রুচি মাফিক বইয়ের পাতায় চোখ রেখে শখ চরিতার্থ করে।মানুষের পুরো মনটার সাক্ষাৎ পাওয়া যায় সাহিত্যে। তাই আমাদের বই পড়তেই হবে। কারণ বই পড়া ছাড়া সাহিত্য পাঠ নেই। এই চর্চার জন্য একক গ্রন্থ সম্ভব নয় চাই লাইব্রেরী।
ধর্ম-দর্শন নীতি,বিজ্ঞানের চর্চা যথাক্রমে মন্দির, গুহা, ঘর এবং গবেষণাগারে করা গেলেও বিদ্যা সংগ্রহ ও চর্চার জন্য পাঠাগারই একমাত্র স্থান।
> বই আমাদের আনন্দ এবং মানসিক সুস্থতাঃ-দেহের খাদ্য ভাত, রুটি মনের খাদ্যের যোগান দেয় বই।মনের সুস্থতার ওপর অনেকাংশে দেহের সুস্থতা নির্ভর করে। মনকে সুস্থ রাখতে হলে ভালো বই পড়া দরকার। ভালো বই পড়াশোনার মধ্য দিয়ে মানুষের মনে আত্মমর্যাদাবোধ সম্পর্কে চেতনা জাগে।
তাছাড়া আমরা দেখি যে মানুষেরা বইকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করেছে তাদের অনেক শত্রু কম। বই পড়ার মাধ্যমে আমাদের মন ভালো থাকে আমাদের মন প্রসন্নতায় ভরে যায়। তাই বই জ্ঞানের প্রতীক বই আনন্দের প্রতীক।
> বই সংস্কার থেকে মুক্তিঃ-মানুষ জীবনে তিনটি জিনিস কামনা করে পুরুষ, স্ত্রী এবং বই।
অবশ্য এই সহচর নির্বাচনে কোনো বাধ্যবাধকতা থাকা উচিত নয়। বইয়ের ক্ষেত্রে যার বই পড়তে ভালো লাগে তাকে সেই বই পড়তে দেওয়া উচিত। তাহলে তার কাছ থেকে নতুন চিন্তার ফসল পাওয়া সম্ভব হবে।
জীবনকে বুঝতে হলে অভ্যাসের সংস্কারের বেড়া ভাঙতে হলে বইয়ের সঙ্গ আমাদের অবশ্য প্রয়োজন।
পরিশেষে বলতে চাই, বইমেলা। শব্দটাকে আলাদা করলে দুটি শব্দ পাওয়া যাবে। একটা বই, অন্যটা মেলা। বই মানেই একটা ভিন্ন জগৎ, ভিন্ন পরিধি। যেখানে প্রবেশ করলে খুব সহজেই ভুলে যাওয়া যায় বাস্তব পৃথিবীকেও। বই শুধু বই-ই নয়, বই একজন ভালো বন্ধুও বটে। যাইহোক বই সম্পর্কে ভালো ভালো সংজ্ঞা আমরা শুনে আসছি। বই নিয়ে তাই আর বিশেষণ দিতে চাই না।
এই যেমন শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় বলেছেন, বই পড়াকে যথার্থ হিসেবে যে সঙ্গী করে নিতে পারে, তার জীবনের দুঃখ কষ্টের বোঝা অনেক কমে যায়। আবার ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ বলেন, মানুষের জীবনে তিনটি জিনিসের প্রয়োজন- বই, বই এবং বই। এই যে এতো সুন্দর সুন্দর উক্তি। এরপরও বই সম্পর্কে আমি আর কি বলব!
এবার আসা যাক বইমেলা নিয়ে। আমি সহজভাবে বলি, যে মেলায় শুধুই বই থাকে তাকে বইমেলা বলা হয়। বইমেলা একটা অন্য আমেজের মেলা। আর আট-দশটা মেলার মতো নয় এই মেলা। তবে এই মেলায়ও বিভিন্ন আইটেম রয়েছে। তবে তা খাওয়ার নয়, পড়ার। আমরা মেলায় গেলে বিভিন্ন খাবার আর প্রয়োজনীয় জিনিস পাই যা ব্যবহার করা এবং খাওয়া যায়। কিন্তু বই হচ্ছে এমন একটি জিনিস যার অস্তিত্ব কখনও ফুরায় না। আপনার কেনা বইটি পড়তে পারবে আপনার বাবা-মা, ভাই-বোন কিংবা আপনার প্রিয়জন। বই সাজিয়ে রাখাও যায়। যা যুগযুগ ধরেই যত্ন করে রাখতে পারলে থাকবে। আর এই বইয়ের সমাহারে সৃষ্টি হয় বইমেলা।আমাদের সবার নিয়মিত বই পড়া উচিত। প্রতিটি পরিবারে একটি করে লাইব্রেরি থাকা উচিত। সেখানে থাকতে হবে বিভিন্ন ধরনের বই। এর ফলে পরিবারের সদস্যরা সহজেই বই পড়ার প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠবে। সবার হৃদয়ে জ্ঞানের আলো প্রবাহিত হবে। বই পড়ার মাধ্যমে একজন ব্যক্তি সব বিষয়ে কম-বেশি জ্ঞান অর্জন করতে পারে।আর বই যে জীবনের কত প্রশ্নের উত্তর জোগায়, তা বলে শেষ করার উপায় নেই। বই হচ্ছে মানুষের চিন্তার লিখিত ভাস্কর্য। বই ও বইমেলার গুরুত্ব অপরিসীম।একুশে গ্রন্থমেলা আমাদের গর্বের অংশ। অধিক পাঠাভ্যাসের মাধ্যমে সার্থক হয়ে উঠুক গ্রন্থমেলা। আমরা বই কিনব, বই পড়ব, প্রিয়জনকে বই উপহার দেব। বই হোক আমাদের নিত্যসঙ্গী। আর চট্টগ্রামবাসীকে বইমেলা  উপহার দেওয়ার জন্য। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।বইমেলার মতো একটা মেলা আয়োজন করার জন্য। জয় হোক বইয়ের, জয় হোক বইমেলার।সার্থক হোক অমর একুশে  বইমেলা।

7 thoughts on “চট্টগ্রামে ভাষার মাসে অমর একুশে বই মেলা শুরু

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

আপডেট সংবাদ

চট্টগ্রামে ভাষার মাসে অমর একুশে বই মেলা শুরু

Update Time : 07:13:52 pm, Thursday, 8 February 2024
চট্টগ্রাম নগরীর সিআরবি শিরীষতলা প্রাঙ্গণে ৯ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার থেকে শুরু হচ্ছে অমর একুশে বইমেলা ২০২৪। ২৩ দিনব্যাপী বইমেলাকে কেন্দ্র করে এরই মধ্যে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক)।চসিকের আয়োজনে ২০১৯ সাল থেকে সম্মিলিতভাবে চট্টগ্রামে ‘অমর একুশে বইমেলা’ হয়ে আসছে।তবে আমাদের এটাও মনে রাখতে হবে, মানুষের বইয়ের প্রতি আগ্রহ এবং ভালোবাসা আছে বলেই এ বইমেলা অনুষ্ঠিত হয়। নয়তো বইও বের হতো না, বইমেলাও সৃষ্টি হতো না। প্রতিবছরের ন্যায় এ বছরও বইমেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ঢাকায় বাংলা একাডেমির আয়োজিত বইমেলার পরেই বড় বইমেলা হচ্ছে চট্টগ্রামে। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন কর্তৃক আয়োজিত এই বইমেলায় সারাদেশের প্রকাশনীর উপস্থিত থাকবেন । এ ছাড়াও দেশের বিভিন্ন জেলায় দুই দিন, তিন দিন এবং সর্বোচ্চ সাত দিন পর্যন্ত খণ্ড খণ্ড বইমেলার আয়োজন করবে। গত বৃহস্পতিবার  (১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪)থেকে শুরু  ভাষার মাস ফেব্রুয়ারি। 
আরো পড়ুন: মেট্রোরেলে চড়ে অফিস পরিদর্শনে নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী
রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি ঢাকার রাজপথে যারা জীবন উৎসর্গ করেছিলেন, তাদের অমলিন স্মৃতি স্মরণের মাস ফেব্রুয়ারি।
বাঙালির কাছে এই মাস ভাষার মাস, দেশপ্রেমে উজ্জীবিত হওয়ার মাস। তাই তো বাঙালি জাতি নানা আয়োজনের মাধ্যমে পুরো ফেব্রুয়ারি মাসজুড়ে ভালোবাসা জানাবে ভাষা শহীদদের প্রতি।
> বইমেলার পরিধি ও বিন্যাস
৯২টি প্রকাশনা সংস্থার অংশগ্রহণে চট্টগ্রামে শুরু হতে যাচ্ছে অমর একুশে বইমেলা।শুক্রবার থেকে এ মেলা শুরু হয়ে চলবে ২ মার্চ পর্যন্ত। নগরের সিআরবি শিরীষতলায় ৪৩ হাজার বর্গফুট জায়গায় আয়োজিত এ মেলায় ১৫৫টি স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। প্রতিদিন বেলা ৩টা থেকে রাত ৯টা এবং ছুটির দিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত মেলায় প্রবেশ করা যাবে।
গত বুধবার ০৭ ফেব্রুয়ারি দুপুরে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) উদ্যোগে মেলা উপলক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে চসিক মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, ‘ভাষার মাসে বইমেলা আয়োজন করা হচ্ছে, যা চট্টগ্রামবাসীর দীর্ঘদিনের চাওয়া। আমরা সিআরবিতে মাসব্যাপী বইমেলা আয়োজনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আশা করছি এই বইমেলাটি লেখক, পাঠক-প্রকাশকদেরও উৎসাহিত করবে। সৃজনশীল, মননশীল, বিজ্ঞানমনস্ক প্রজন্ম গড়তে বই বড় ভূমিকা রাখবে।’ মাসব্যাপী বইমেলার অনুষ্ঠানমালায় রয়েছে ররীন্দ্র উৎসব, নজরুল উৎসব, লেখক সমাবেশ, যুব উৎসব, শিশু উৎসব, মুক্তিযুদ্ধ উৎসব, ছড়া উৎসব, কবিতা উৎসব, মাতৃভাষা দিবস ২১ ফেব্রুয়ারির আলোচনা, লোক উৎসব, তারুণ্য উৎসব, নারী উৎসব, বসন্ত উৎসব, মরমী উৎসব, আবৃত্তি উৎসব, নৃগোষ্ঠী উৎসব, পেশাজীবী সমাবেশ, কুইজ প্রতিযোগিতা, চাটগাঁ উৎসব, স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ও আলোকচিত্র প্রদর্শনী, বইমেলার সমাপনী ও পুরস্কার বিতরণের আয়োজন। এ ছাড়া মেলা মঞ্চে প্রতিদিন শিশু-কিশোরদের চিত্রাঙ্কন, রবীন্দ্র-নজরুলসংগীত, লোকসংগীত, সাধারণ নৃত্য, লোকনৃত্য, আবৃত্তি, উপস্থিত বক্তৃতা, দেশের গানের আয়োজন করা হবে। মেলাকে আকর্ষণীয় করার লক্ষ্যে চট্টগ্রামের লেখক, সাহিত্যিক, সংস্কৃতিকর্মী ও বইপ্রেমীদের নিয়ে বিভিন্ন উপপরিষদ গঠন করা হয়েছে।
মেলার সার্বিক নিরাপত্তার জন্য বেসরকারি পেশাদার একটি নিরাপত্তা সংস্থা সার্বক্ষণিক নিয়োজিত থাকবে। এ ছাড়া পুলিশের পক্ষ থেকে সার্বক্ষণিক নিরাপত্তাব্যবস্থা করা হয়েছে। গোটা মেলা সিসিটিভির আওতায় থাকবে। মেলার নিরাপত্তার জন্য শিরীষতলার পাশের রাস্তাটিও বন্ধ রাখা হবে।আজকাল আমরা বইপড়া প্রায় ভুলে যেতে বসেছি। বই পড়ার দিকে আমাদের যতটা না মনোযোগ, তার চেয়ে অনেক বেশি আগ্রহ ফেসবুকের প্রতি। ফেসবুক, ইউটিউব, ইন্টারনেট আর মোবাইলের নেশায় আমরা প্রকৃত বইপড়ার আনন্দটাই ভুলে যেতে বসেছি। বই হতে পারে উপহারের একটি উপকরণ। সেটাও যেন বিলীন হতে বসেছে। প্রিয়জনকে বেশি বেশি বই উপহার দিলে, নিজে বই কিনলে এবং নিয়মিত বই পড়লে, বইকে নিত্যসঙ্গী করতে পারলে যেমন নিজের জ্ঞানের পরিধি বাড়ে, তেমনি সুস্থ, সুন্দর জীবনযাপন করা যায়। বই হল প্রকৃত বন্ধু, বই হল বিপদের বন্ধু- যাকে সবসময় কাছে পাওয়া যায়।
আজ সমাজে যত অপকর্ম, অন্যায়-অবিচার, ব্যভিচার, অনৈতিক কর্মকাণ্ড- সবকিছুর মূল হল জ্ঞানহীন, মূল্যবোধহীন সমাজব্যবস্থা। এর প্রধান কারণ হল বই থেকে, জ্ঞানীগুণী ব্যক্তি থেকে বিচ্ছিন্ন জীবনযাপন। দেশি-বিদেশি অসংখ্য টেলিভিশন চ্যানেল বিনোদনের নামে আমাদের অনেক কর্মঘণ্টা কেড়ে নিচ্ছে। অথচ বিনোদনের এ আনন্দটুকু আমরা নির্ভেজালভাবে অনায়াসেই নিতে পারি বই পড়ার মাধ্যমে
> বই যে আমার প্রিয় বন্ধুঃ-
এই মানব জীবনে সবচেয়ে বড় সম্পদ হলো বই।বই আমার সবচেয়ে প্রিয় বন্ধু। ‘বন্ধু’ শব্দটি কতই মধুর! বন্ধুত্ব নৈকট্যের পরিচয়বাহী, সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতি, ভালোবাসা ও হৃদ্যতা এবং পারস্পরিক সুসম্পর্ক ও মানসিক বন্ধনের প্রতীক। বন্ধুত্বের ফাটল বেদনাদায়ক হলেও অস্বাভাবিক নয়; যখন তখন লক্ষণীয়। অনেকে আজ বন্ধু কাল শত্রু। বন্ধু হয়ে বেঈমানি আর বিশ্বাসঘাতকতা কারো কাম্য নয়। কিন্তু অপ্রত্যাশিত হলেও অহরহ ঘটছে। শুধু বন্ধু কেন পারস্পরিক স্বার্থের দ্বন্দ্বে বাবা-মা, ভাইবোন, নিকট আত্মীয়স্বজন ও পাড়া প্রতিবেশীদের মধ্যে সৃষ্টি হচ্ছে দূরত্ব। ছড়িয়ে পড়ছে হিংসা হানাহানি। পিপীলিকা যেমন বিপদে পানিতে পতিত গাছের পাতাকে বাঁচার অবলম্বন করে নেয়, তেমনি মানুষও বিপদ হতে বাঁচতে চায়, একটু আশ্রয় খোঁজে। প্রয়োজন হয় ভালো বন্ধুর। রক্ত মাংসে গড়া মানুষকে যেখানে বন্ধু হিসেবে ভেবেও সন্দেহ হয়, বিশ্বাস-অবিশ্বাসের দোলাচল কাজ করে, সেখানে মানুষের প্রকৃত বন্ধু হতে পারে বই।আর পড়তে শেখার পর থেকেই বিভিন্ন গল্পের বই পড়তে শুরু করি। খুবই ভালো লাগতো গল্পের বই পড়তে। কখনও বা অভিনয় করে পড়তাম।ছোটবেলা থেকেই খুব বই পড়তে ভালোবাসি। যে বইটা পড়তে শুরু করি সেটা শেষ না করলে ভালোই লাগেনা। আর সেই ছোট কাল থেকেই বইয়ের প্রতি আমার আকর্ষণ রয়েছে। পাঠ্য বইয়ের পাশাপাশি বিভিন্ন বই পড়ি।কেউ যদি আমাকে বই উপহার দেয় তাহলে আমি খুব খুশি হই। বই উপহার পাওয়ার মধ্যে যে আনন্দ আছে তা অন্য কিছুতে নেই। আর এসএসসি পরীক্ষার পর অবসরে প্রচুর বই পড়েছি আমি। আমি জানি এগুলো আমাকে কীভাবে সমৃদ্ধ করেছে।আর বই পড়ে মানুষ অজানাকে জানতে পারে অচেনাকে চিনতে পারে।
তাই বই বিশ্বাসের অঙ্গ জীবন যুদ্ধের হাতিয়ার। বই আমাদেরকে অন্ধকার থেকে বের করে এনে আলোর দিকে নিয়ে আসে।বই অন্ধকার দূর করে সভ্যতার অগ্রগতি ঘটায়। তাই বই যেমন সভ্যতার রক্ষাকবচ তেমন সভ্যতার চাবিকাঠি। সভ্যতার আদি লগ্ন থেকে বই অতীত ও বর্তমানের বহুমুখী জ্ঞান সম্পদকে বহন করে চলেছে।
> পাঠাগার ভান্ডারঃ-
বই পড়া সকল দেশের মানুষের কাছে একটি শখের বিষয়। বিভিন্ন রুচির মানুষ তাদের রুচি মাফিক বইয়ের পাতায় চোখ রেখে শখ চরিতার্থ করে।মানুষের পুরো মনটার সাক্ষাৎ পাওয়া যায় সাহিত্যে। তাই আমাদের বই পড়তেই হবে। কারণ বই পড়া ছাড়া সাহিত্য পাঠ নেই। এই চর্চার জন্য একক গ্রন্থ সম্ভব নয় চাই লাইব্রেরী।
ধর্ম-দর্শন নীতি,বিজ্ঞানের চর্চা যথাক্রমে মন্দির, গুহা, ঘর এবং গবেষণাগারে করা গেলেও বিদ্যা সংগ্রহ ও চর্চার জন্য পাঠাগারই একমাত্র স্থান।
> বই আমাদের আনন্দ এবং মানসিক সুস্থতাঃ-দেহের খাদ্য ভাত, রুটি মনের খাদ্যের যোগান দেয় বই।মনের সুস্থতার ওপর অনেকাংশে দেহের সুস্থতা নির্ভর করে। মনকে সুস্থ রাখতে হলে ভালো বই পড়া দরকার। ভালো বই পড়াশোনার মধ্য দিয়ে মানুষের মনে আত্মমর্যাদাবোধ সম্পর্কে চেতনা জাগে।
তাছাড়া আমরা দেখি যে মানুষেরা বইকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করেছে তাদের অনেক শত্রু কম। বই পড়ার মাধ্যমে আমাদের মন ভালো থাকে আমাদের মন প্রসন্নতায় ভরে যায়। তাই বই জ্ঞানের প্রতীক বই আনন্দের প্রতীক।
> বই সংস্কার থেকে মুক্তিঃ-মানুষ জীবনে তিনটি জিনিস কামনা করে পুরুষ, স্ত্রী এবং বই।
অবশ্য এই সহচর নির্বাচনে কোনো বাধ্যবাধকতা থাকা উচিত নয়। বইয়ের ক্ষেত্রে যার বই পড়তে ভালো লাগে তাকে সেই বই পড়তে দেওয়া উচিত। তাহলে তার কাছ থেকে নতুন চিন্তার ফসল পাওয়া সম্ভব হবে।
জীবনকে বুঝতে হলে অভ্যাসের সংস্কারের বেড়া ভাঙতে হলে বইয়ের সঙ্গ আমাদের অবশ্য প্রয়োজন।
পরিশেষে বলতে চাই, বইমেলা। শব্দটাকে আলাদা করলে দুটি শব্দ পাওয়া যাবে। একটা বই, অন্যটা মেলা। বই মানেই একটা ভিন্ন জগৎ, ভিন্ন পরিধি। যেখানে প্রবেশ করলে খুব সহজেই ভুলে যাওয়া যায় বাস্তব পৃথিবীকেও। বই শুধু বই-ই নয়, বই একজন ভালো বন্ধুও বটে। যাইহোক বই সম্পর্কে ভালো ভালো সংজ্ঞা আমরা শুনে আসছি। বই নিয়ে তাই আর বিশেষণ দিতে চাই না।
এই যেমন শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় বলেছেন, বই পড়াকে যথার্থ হিসেবে যে সঙ্গী করে নিতে পারে, তার জীবনের দুঃখ কষ্টের বোঝা অনেক কমে যায়। আবার ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ বলেন, মানুষের জীবনে তিনটি জিনিসের প্রয়োজন- বই, বই এবং বই। এই যে এতো সুন্দর সুন্দর উক্তি। এরপরও বই সম্পর্কে আমি আর কি বলব!
এবার আসা যাক বইমেলা নিয়ে। আমি সহজভাবে বলি, যে মেলায় শুধুই বই থাকে তাকে বইমেলা বলা হয়। বইমেলা একটা অন্য আমেজের মেলা। আর আট-দশটা মেলার মতো নয় এই মেলা। তবে এই মেলায়ও বিভিন্ন আইটেম রয়েছে। তবে তা খাওয়ার নয়, পড়ার। আমরা মেলায় গেলে বিভিন্ন খাবার আর প্রয়োজনীয় জিনিস পাই যা ব্যবহার করা এবং খাওয়া যায়। কিন্তু বই হচ্ছে এমন একটি জিনিস যার অস্তিত্ব কখনও ফুরায় না। আপনার কেনা বইটি পড়তে পারবে আপনার বাবা-মা, ভাই-বোন কিংবা আপনার প্রিয়জন। বই সাজিয়ে রাখাও যায়। যা যুগযুগ ধরেই যত্ন করে রাখতে পারলে থাকবে। আর এই বইয়ের সমাহারে সৃষ্টি হয় বইমেলা।আমাদের সবার নিয়মিত বই পড়া উচিত। প্রতিটি পরিবারে একটি করে লাইব্রেরি থাকা উচিত। সেখানে থাকতে হবে বিভিন্ন ধরনের বই। এর ফলে পরিবারের সদস্যরা সহজেই বই পড়ার প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠবে। সবার হৃদয়ে জ্ঞানের আলো প্রবাহিত হবে। বই পড়ার মাধ্যমে একজন ব্যক্তি সব বিষয়ে কম-বেশি জ্ঞান অর্জন করতে পারে।আর বই যে জীবনের কত প্রশ্নের উত্তর জোগায়, তা বলে শেষ করার উপায় নেই। বই হচ্ছে মানুষের চিন্তার লিখিত ভাস্কর্য। বই ও বইমেলার গুরুত্ব অপরিসীম।একুশে গ্রন্থমেলা আমাদের গর্বের অংশ। অধিক পাঠাভ্যাসের মাধ্যমে সার্থক হয়ে উঠুক গ্রন্থমেলা। আমরা বই কিনব, বই পড়ব, প্রিয়জনকে বই উপহার দেব। বই হোক আমাদের নিত্যসঙ্গী। আর চট্টগ্রামবাসীকে বইমেলা  উপহার দেওয়ার জন্য। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।বইমেলার মতো একটা মেলা আয়োজন করার জন্য। জয় হোক বইয়ের, জয় হোক বইমেলার।সার্থক হোক অমর একুশে  বইমেলা।
আরো পড়ুন: ১৯৩ দেশ ঘুরে ৭৯ বয়সি লুইসার রেকর্ড