Dhaka 11:22 pm, Saturday, 18 May 2024

মডেল মসজিদ নির্মাণে ঠিকাদারের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিশ্রুত অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বরিশাল জেলার বাকেরগঞ্জ উপজেলায় ১১ কোটি টাকা ব্যয়ে মডেল মসজিদ নির্মাণ প্রকল্পের কাজে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ কাজ শুরু থেকেই।কাজের সিডিউলকে তোয়াক্কা না করে নিয়মবহির্ভূতভাবে নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে নির্মাণ কাজ  করে আসছে ঠিকাদার। বরিশাল গণপূর্ত অফিস সূত্রে জানা গেছে, প্রতিটি জেলা, উপজেলায় একটি করে ৫৬০টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র স্থাপন’ প্রকল্পের আওতায় বাকেরগঞ্জ উপজেলায় তিনতলা মডেল মসজিদ নির্মাণের জন্য ১১ কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নেয়া হয়। বাকেরগঞ্জে কাজটি করছেন হাজী এন্টারপ্রাইজ নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ঠিকাদার কবির সিকদার তিন বছর আগে মডেল মসজিদ নির্মাণ কাজ শুরু করে। ২০২৩ সালের (৩০ অক্টোবর) বেলা ১১ টায় বঙ্গবন্ধু চীন- মৈত্রী প্রদর্শনী কেন্দ্র-পূর্বাচল থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ষষ্ঠ পর্বে বাকেরগঞ্জের মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র উদ্বোধন করেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আর উদ্বোধনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়েছে মসজিদ নির্মাণের কাজ।
মডেল মসজিদটি উদ্বোধনের ৬ মাস পার হলেও নির্মাণ কাজ বন্ধ রেখেছে ঠিকাদার। ঠিকাদার মডেল মসজিদের নির্মাণ কাজ শেষ না করেই কাজের বিল উত্তোলন করে নিলেও বর্তমানে কোনো কাজ করছেন না। আর এ কারনে বরিশাল গণপূর্ত বিভাগের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী আশরাফুল আলম ঠিকাদারের বিরুদ্ধে ৮০/৫ স্মারকে বর্তমানে মসজিদের নির্মাণ কাজ সম্পন্নরূপে বন্ধ রাখায় ও কাজের সাইডে কোন প্রকার লোকবল না থাকায় প্রকল্পের নির্ধারিত সময় কাজ শেষ না করায় দ্রুত কাজ বাস্তবায়ন করার নির্দেশ প্রদান করলেও ঠিকাদার নির্মাণ কাজ শুরু করেনি এখনো।
সরেজমিনে দেখা যায়, বাকেরগঞ্জ বরগুনা আঞ্চলিক সড়কের পাশে বাস স্ট্যান্ড থেকে প্রায় আধা কিলোমিটার পশ্চিমে পৌরসভার ১ নং ওয়ার্ডে নির্মাণ করা হচ্ছে উপজেলা মডেল মসজিদ। নিয়ম অনুযায়ী, নির্মাণ স্থলে কাজের বিবরণের সাইনবোর্ড টানানোর কথা থাকলেও তা করেনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। মসজিদের নির্মাণ কাজ শুরুর আগে সেখানে একটি সাইড অফিস নির্মাণ করার নিয়ম থাকলেও সেটাও করেনি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মের্সাস হাজী এন্টারপ্রাইজ। দীর্ঘ সময় নিয়ে ঠিকাদার নিজের ইচ্ছা মতো নির্মাণ কাজ করে আসলেও রয়েছে তদারকির অভাব। দীর্ঘদিন কাজ বন্ধ রাখার কারণে লোহার তৈরির দরজা জানালা গুলো মরিচা পড়ে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। মসজিদের গম্বুজে বড় বড় ফাটল দেখা দিয়েছে। এছাড়াও টুকরো টুকরো টাইলসের ব্যাবহারের পাশাপাশি টাইলসের পুরত্ব নিয়েও রয়েছে ব্যাপক অনিয়ম। নির্মাণাধীন ভবনের বিভিন্ন স্থানে পলেস্তারা এখনি ফাটল দেখা দিয়েছে। এছাড়াও নতুন ইলেকট্রনিক সুইচ বোর্ডে লক ভাঙা দেখা গেছে। নির্মাণাধীন মসজিদের ছাদের উপর জল ছাদ ঢালাইয়ে ত্রুটির কারণে বর্ষার পানি জমে থেকে জলছাদের উপরের অংশ ফেটে উঠে যাচ্ছে। মডেল মসজিদটির নির্মাণের সময়সীমা শেষ হয়েছে। অথচ ঠিকেদার কাজ না করেই এভাবে ফেলে রেখেছেন নির্মাণ কাজ। মসজিদটির দ্বিতীয় তলার টাইলসের কাজ সহ অধিকাংশ কাজ এখনো বাকি রয়েছে। মসজিদটি নির্মাণ কাজ আরো এক বছরেও শেষ হবে কিনা তা নিয়ে নানান রকম প্রশ্ন উঠেছে।
বরিশাল গণপূর্ত উপ-বিভাগ -বিভাগীয় প্রকৌশলী আশরাফ-উল আলম সংবাদ দিগন্তকে  জানান, নিন্মমানের টাইলস বসানো সম্পর্কে স্থানীয়দের অভিযোগ বিষয়টি সরেজমিন পরিদর্শন করে দেখবেন। তবে আমরা যে টাইলসের কাজ করেছি লোকালে এর চেয়ে ভালো নেই। আর সাইড অফিস কেন নির্মাণ করা হয়নি প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ৩৪ শতাংশ জমির উপরে মূল ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। জমি সংকটের কারণে হয়তো অফিস নির্মাণ করেনি ঠিকাদার। সরকারি বরাদ্দের যে টাকা অফিসের জন্য ছিল সেটা ঠিকাদার ফেরত দিবেন। ঠিকাদারের বিরুদ্ধে ৮০/৫ স্মারকে বর্তমানে মসজিদের নির্মাণ কাজ সম্পন্নরূপে বন্ধ রাখায় ও কাজের সাইডে কোন প্রকার লোকবল না থাকায় প্রকল্পের নির্ধারিত সময় কাজ শেষ না করায় দ্রুত কাজ বাস্তবায়ন করার নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঠিকাদার কবির সিকদার বলেন, ঠিকাদারি কাজে সামান্য সমস্যা হতেই পারে। সব বিষয়ে ধরলে আমরা কাজ করব কীভাবে? যখন মসজিদে টেন্ডার হয়েছে তার চেয়ে এখন নির্মাণ সামগ্রীর দাম অনেক বেশি। এখন টাকার সমস্যা তাই কাজ বন্ধ রয়েছে।

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

আপডেট সংবাদ

মডেল মসজিদ নির্মাণে ঠিকাদারের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ

Update Time : 06:27:00 pm, Wednesday, 24 April 2024
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিশ্রুত অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বরিশাল জেলার বাকেরগঞ্জ উপজেলায় ১১ কোটি টাকা ব্যয়ে মডেল মসজিদ নির্মাণ প্রকল্পের কাজে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ কাজ শুরু থেকেই।কাজের সিডিউলকে তোয়াক্কা না করে নিয়মবহির্ভূতভাবে নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে নির্মাণ কাজ  করে আসছে ঠিকাদার। বরিশাল গণপূর্ত অফিস সূত্রে জানা গেছে, প্রতিটি জেলা, উপজেলায় একটি করে ৫৬০টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র স্থাপন’ প্রকল্পের আওতায় বাকেরগঞ্জ উপজেলায় তিনতলা মডেল মসজিদ নির্মাণের জন্য ১১ কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নেয়া হয়। বাকেরগঞ্জে কাজটি করছেন হাজী এন্টারপ্রাইজ নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ঠিকাদার কবির সিকদার তিন বছর আগে মডেল মসজিদ নির্মাণ কাজ শুরু করে। ২০২৩ সালের (৩০ অক্টোবর) বেলা ১১ টায় বঙ্গবন্ধু চীন- মৈত্রী প্রদর্শনী কেন্দ্র-পূর্বাচল থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ষষ্ঠ পর্বে বাকেরগঞ্জের মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র উদ্বোধন করেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আর উদ্বোধনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়েছে মসজিদ নির্মাণের কাজ।
আরো পড়ুন:বাকেরগঞ্জ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থীদের মাঝে প্রতীক বরাদ্দ
মডেল মসজিদটি উদ্বোধনের ৬ মাস পার হলেও নির্মাণ কাজ বন্ধ রেখেছে ঠিকাদার। ঠিকাদার মডেল মসজিদের নির্মাণ কাজ শেষ না করেই কাজের বিল উত্তোলন করে নিলেও বর্তমানে কোনো কাজ করছেন না। আর এ কারনে বরিশাল গণপূর্ত বিভাগের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী আশরাফুল আলম ঠিকাদারের বিরুদ্ধে ৮০/৫ স্মারকে বর্তমানে মসজিদের নির্মাণ কাজ সম্পন্নরূপে বন্ধ রাখায় ও কাজের সাইডে কোন প্রকার লোকবল না থাকায় প্রকল্পের নির্ধারিত সময় কাজ শেষ না করায় দ্রুত কাজ বাস্তবায়ন করার নির্দেশ প্রদান করলেও ঠিকাদার নির্মাণ কাজ শুরু করেনি এখনো।
আরো পড়ুন:বাকেরগঞ্জে জমি নিয়ে বিরোধে চাচাতো ভাইকে কুপিয়ে আহত
সরেজমিনে দেখা যায়, বাকেরগঞ্জ বরগুনা আঞ্চলিক সড়কের পাশে বাস স্ট্যান্ড থেকে প্রায় আধা কিলোমিটার পশ্চিমে পৌরসভার ১ নং ওয়ার্ডে নির্মাণ করা হচ্ছে উপজেলা মডেল মসজিদ। নিয়ম অনুযায়ী, নির্মাণ স্থলে কাজের বিবরণের সাইনবোর্ড টানানোর কথা থাকলেও তা করেনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। মসজিদের নির্মাণ কাজ শুরুর আগে সেখানে একটি সাইড অফিস নির্মাণ করার নিয়ম থাকলেও সেটাও করেনি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মের্সাস হাজী এন্টারপ্রাইজ। দীর্ঘ সময় নিয়ে ঠিকাদার নিজের ইচ্ছা মতো নির্মাণ কাজ করে আসলেও রয়েছে তদারকির অভাব। দীর্ঘদিন কাজ বন্ধ রাখার কারণে লোহার তৈরির দরজা জানালা গুলো মরিচা পড়ে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। মসজিদের গম্বুজে বড় বড় ফাটল দেখা দিয়েছে। এছাড়াও টুকরো টুকরো টাইলসের ব্যাবহারের পাশাপাশি টাইলসের পুরত্ব নিয়েও রয়েছে ব্যাপক অনিয়ম। নির্মাণাধীন ভবনের বিভিন্ন স্থানে পলেস্তারা এখনি ফাটল দেখা দিয়েছে। এছাড়াও নতুন ইলেকট্রনিক সুইচ বোর্ডে লক ভাঙা দেখা গেছে। নির্মাণাধীন মসজিদের ছাদের উপর জল ছাদ ঢালাইয়ে ত্রুটির কারণে বর্ষার পানি জমে থেকে জলছাদের উপরের অংশ ফেটে উঠে যাচ্ছে। মডেল মসজিদটির নির্মাণের সময়সীমা শেষ হয়েছে। অথচ ঠিকেদার কাজ না করেই এভাবে ফেলে রেখেছেন নির্মাণ কাজ। মসজিদটির দ্বিতীয় তলার টাইলসের কাজ সহ অধিকাংশ কাজ এখনো বাকি রয়েছে। মসজিদটি নির্মাণ কাজ আরো এক বছরেও শেষ হবে কিনা তা নিয়ে নানান রকম প্রশ্ন উঠেছে।
আরো পড়ুন:বাকেরগঞ্জে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে শ্রমিকের মৃত্যু
বরিশাল গণপূর্ত উপ-বিভাগ -বিভাগীয় প্রকৌশলী আশরাফ-উল আলম সংবাদ দিগন্তকে  জানান, নিন্মমানের টাইলস বসানো সম্পর্কে স্থানীয়দের অভিযোগ বিষয়টি সরেজমিন পরিদর্শন করে দেখবেন। তবে আমরা যে টাইলসের কাজ করেছি লোকালে এর চেয়ে ভালো নেই। আর সাইড অফিস কেন নির্মাণ করা হয়নি প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ৩৪ শতাংশ জমির উপরে মূল ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। জমি সংকটের কারণে হয়তো অফিস নির্মাণ করেনি ঠিকাদার। সরকারি বরাদ্দের যে টাকা অফিসের জন্য ছিল সেটা ঠিকাদার ফেরত দিবেন। ঠিকাদারের বিরুদ্ধে ৮০/৫ স্মারকে বর্তমানে মসজিদের নির্মাণ কাজ সম্পন্নরূপে বন্ধ রাখায় ও কাজের সাইডে কোন প্রকার লোকবল না থাকায় প্রকল্পের নির্ধারিত সময় কাজ শেষ না করায় দ্রুত কাজ বাস্তবায়ন করার নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঠিকাদার কবির সিকদার বলেন, ঠিকাদারি কাজে সামান্য সমস্যা হতেই পারে। সব বিষয়ে ধরলে আমরা কাজ করব কীভাবে? যখন মসজিদে টেন্ডার হয়েছে তার চেয়ে এখন নির্মাণ সামগ্রীর দাম অনেক বেশি। এখন টাকার সমস্যা তাই কাজ বন্ধ রয়েছে।