Dhaka 10:46 pm, Saturday, 18 May 2024

বাকেরগঞ্জে সব প্রাণির চিকিৎসা দিচ্ছেন কম্পাউন্ডার

বরিশাল জেলার বাকেরগঞ্জ উপজেলা ভেটেরিনারি হাসপাতালে নেই প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ও ভেটেরিনারি সার্জন। এতে ধীরগতিতে চলছে অফিসের কার্যক্রম। ফলে উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম থেকে আগত খামারিরা সেবা পাচ্ছেন না। ১৮ এপ্রিল (বৃহস্পতিবার) উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম থেকে অসুস্থ পশু নিয়ে এসেছেন খামারিরা। আবার অনেক খামারিরা এসেছেন প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার কাছে পশুপালন সম্পর্কিত পরামর্শ নিতে। অধিকাংশ পশুপাখি পোষা মালিকেরা নিয়ে এসেছেন চিকিৎসা দেয়ার জন্য। কিন্তু অফিসে পর্যাপ্ত লোকবল না থাকায় তারা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। চলতি বছরের মার্চ মাসে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো: সালেহ আল রেজা সরকারি সফরে দেশের বাইরে গেছেন। যে কারণে পদটি শূন্য রয়েছে। এছাড়াও ভেটেরিনারি সার্জন কর্মকর্তা মো: আমিরুল ইসলাম সোহাগ ট্রেনিংয়ের জন্য দুই মাস যাবত ঢাকায় আছেন। উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার পদটিতে বর্তমানে দায়িত্ব পালন করছেন জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডঃ সুশান্ত দাস। তার সাথে একাধিকবার ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, জনবল সংকট, সহকারি প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা নেই। উপসহকারী চার জন থাকার কথা রয়েছে, আছে মাত্র দুই জন। অফিস সহকারী পদ শূন্য। কৃত্রিম প্রজনন সেবাকর্মী ১৪টি ইউনিয়নে থাকার কথা থাকলেও সেখানেও রয়েছে সংকট। অপরদিকে, কৃত্রিম প্রজনন সেবা কমীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে মাঠ পর্যায়ে অর্থের বিনিময়ে গবাদিপশুর চিকিৎসা দিয়ে আসার। এছাড়াও গুরুতর অভিযোগ রয়েছে কম্পাউন্ডার সেলিয়া ইয়াসমিনের বিরুদ্ধে। তিনি টাকা ছাড়া কোন পশুর চিকিৎসা দেন না। পশু হাসপাতালটিতে কোন ডাক্তার না থাকায় মানুষ নিরুপায় হয়ে কম্পাউন্ডার সেলিনা ইয়াসমিনকে টাকা দিয়েই পশুর চিকিৎসা করায়।
বাকেরগঞ্জ উপজেলা প্রনিসম্পদ অফিসে সেবা নিতে আসা কয়েকজন লোকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দপ্তরটিতে প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ও ভেটেরিনারি সার্জন কর্মকর্তা না থাকায় পশু চিকিৎসা ও লালন-পালনের বিষয়ে পরিপূর্ণ সেবা পাচ্ছেন না তারা। অনেকে অভিযোগ করে বলেন, পাঁচ বার পশু হাসপাতালে এসেও মুরগির টিকা পাইনি। নিরুপায় হয়ে অধিক মূল্যে ফার্মেসি থেকে ক্রয় করতে হয় মুরগির টিকা। রঙ্গশ্রী ইউনিয়নের নন্দপাড়া গ্রামের মাহমুদা বেগম অভিযোগ করে বলেন, আমি একটি ছাগল নিয়ে সকালবেলা এই পশু হাসপাতালে আসছি। কম্পাউন্ডার সেলিনা ইয়াসমিন আমাকে তিন ঘন্টা বসিয়ে রেখেছে। তাকে ১০০ টাকা দিয়েছি তারপরে আমার ছাগলের চিকিৎসা দিয়েছে। এখন পশুর চিকিৎসা নিতে এসে নিরুপায় হয়েই কম্পাউন্ডারকে টাকা দিতে হচ্ছে সকলের। আর টাকা না দিলে চিকিৎসা মিলছে না।
সরেজমিনে দেখা যায়, ভেটেরিনারি হাসপাতাল প্রকট জনবল সংকটে ভুগছে। এতে উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ প্রাণিসম্পদ দপ্তরের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। পাশাপাশি সব প্রাণীর চিকিৎসা দিচ্ছেন কম্পাউন্ডার। চিকিৎসকের অভাবে সরকারি ওই ভেটেরিনারি হাসপাতালে পশুর স্বাস্থ্যসেবা মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে। স্থানীয় গবাদি পশু পালনকারী ও খামারিদের অনেকে জানিয়েছেন, ভেটেরিনারি চিকিৎসক ছাড়া কোনো গবাদি পশুর চিকিৎসা অন্য কারো করার কথা নয়। অথচ এই হাসপাতালে ভেটেরিনারি চিকিৎসক নেই। সেখানে অসুস্থ গরু-ছাগলসহ বিভিন্ন গবাদি পশুর নানা রোগের চিকিৎসা করছেন ওই হাসপাতালের ভেটেরিনারি কম্পাউন্ডার। সব রোগের চিকিৎসায় তিনি সাদা কাগজে চিকিৎসাপত্র লিখে দিচ্ছেন। এমনকি উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে খামারির মালিকের বাড়িতে গিয়ে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে পশুর চিকিৎসা দিয়ে আসছেন এই কম্পাউন্ডার। যে কারণে প্রতিদিন উপজেলায় অকালে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছে  অনেক পশু।

One thought on “বাকেরগঞ্জে সব প্রাণির চিকিৎসা দিচ্ছেন কম্পাউন্ডার

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

আপডেট সংবাদ

বাকেরগঞ্জে সব প্রাণির চিকিৎসা দিচ্ছেন কম্পাউন্ডার

Update Time : 03:40:17 pm, Saturday, 20 April 2024
বরিশাল জেলার বাকেরগঞ্জ উপজেলা ভেটেরিনারি হাসপাতালে নেই প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ও ভেটেরিনারি সার্জন। এতে ধীরগতিতে চলছে অফিসের কার্যক্রম। ফলে উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম থেকে আগত খামারিরা সেবা পাচ্ছেন না। ১৮ এপ্রিল (বৃহস্পতিবার) উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম থেকে অসুস্থ পশু নিয়ে এসেছেন খামারিরা। আবার অনেক খামারিরা এসেছেন প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার কাছে পশুপালন সম্পর্কিত পরামর্শ নিতে। অধিকাংশ পশুপাখি পোষা মালিকেরা নিয়ে এসেছেন চিকিৎসা দেয়ার জন্য। কিন্তু অফিসে পর্যাপ্ত লোকবল না থাকায় তারা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। চলতি বছরের মার্চ মাসে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো: সালেহ আল রেজা সরকারি সফরে দেশের বাইরে গেছেন। যে কারণে পদটি শূন্য রয়েছে। এছাড়াও ভেটেরিনারি সার্জন কর্মকর্তা মো: আমিরুল ইসলাম সোহাগ ট্রেনিংয়ের জন্য দুই মাস যাবত ঢাকায় আছেন। উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার পদটিতে বর্তমানে দায়িত্ব পালন করছেন জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডঃ সুশান্ত দাস। তার সাথে একাধিকবার ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
আরো পড়ুন:উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী বিশ্বাস মুতিউর রহমান বাদশার গণসংযোগ
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, জনবল সংকট, সহকারি প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা নেই। উপসহকারী চার জন থাকার কথা রয়েছে, আছে মাত্র দুই জন। অফিস সহকারী পদ শূন্য। কৃত্রিম প্রজনন সেবাকর্মী ১৪টি ইউনিয়নে থাকার কথা থাকলেও সেখানেও রয়েছে সংকট। অপরদিকে, কৃত্রিম প্রজনন সেবা কমীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে মাঠ পর্যায়ে অর্থের বিনিময়ে গবাদিপশুর চিকিৎসা দিয়ে আসার। এছাড়াও গুরুতর অভিযোগ রয়েছে কম্পাউন্ডার সেলিয়া ইয়াসমিনের বিরুদ্ধে। তিনি টাকা ছাড়া কোন পশুর চিকিৎসা দেন না। পশু হাসপাতালটিতে কোন ডাক্তার না থাকায় মানুষ নিরুপায় হয়ে কম্পাউন্ডার সেলিনা ইয়াসমিনকে টাকা দিয়েই পশুর চিকিৎসা করায়।
আরো পড়ুন:বাকেরগঞ্জে মসজিদ ভাংচুরের অভিযোগ আটক-১
বাকেরগঞ্জ উপজেলা প্রনিসম্পদ অফিসে সেবা নিতে আসা কয়েকজন লোকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দপ্তরটিতে প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ও ভেটেরিনারি সার্জন কর্মকর্তা না থাকায় পশু চিকিৎসা ও লালন-পালনের বিষয়ে পরিপূর্ণ সেবা পাচ্ছেন না তারা। অনেকে অভিযোগ করে বলেন, পাঁচ বার পশু হাসপাতালে এসেও মুরগির টিকা পাইনি। নিরুপায় হয়ে অধিক মূল্যে ফার্মেসি থেকে ক্রয় করতে হয় মুরগির টিকা। রঙ্গশ্রী ইউনিয়নের নন্দপাড়া গ্রামের মাহমুদা বেগম অভিযোগ করে বলেন, আমি একটি ছাগল নিয়ে সকালবেলা এই পশু হাসপাতালে আসছি। কম্পাউন্ডার সেলিনা ইয়াসমিন আমাকে তিন ঘন্টা বসিয়ে রেখেছে। তাকে ১০০ টাকা দিয়েছি তারপরে আমার ছাগলের চিকিৎসা দিয়েছে। এখন পশুর চিকিৎসা নিতে এসে নিরুপায় হয়েই কম্পাউন্ডারকে টাকা দিতে হচ্ছে সকলের। আর টাকা না দিলে চিকিৎসা মিলছে না।
আরো পড়ুন:বাকেরগঞ্জে ডাকাতির প্রস্তুতিকালে ডাকাত রানাসহ ৩ জন গ্রেফতার
সরেজমিনে দেখা যায়, ভেটেরিনারি হাসপাতাল প্রকট জনবল সংকটে ভুগছে। এতে উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ প্রাণিসম্পদ দপ্তরের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। পাশাপাশি সব প্রাণীর চিকিৎসা দিচ্ছেন কম্পাউন্ডার। চিকিৎসকের অভাবে সরকারি ওই ভেটেরিনারি হাসপাতালে পশুর স্বাস্থ্যসেবা মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে। স্থানীয় গবাদি পশু পালনকারী ও খামারিদের অনেকে জানিয়েছেন, ভেটেরিনারি চিকিৎসক ছাড়া কোনো গবাদি পশুর চিকিৎসা অন্য কারো করার কথা নয়। অথচ এই হাসপাতালে ভেটেরিনারি চিকিৎসক নেই। সেখানে অসুস্থ গরু-ছাগলসহ বিভিন্ন গবাদি পশুর নানা রোগের চিকিৎসা করছেন ওই হাসপাতালের ভেটেরিনারি কম্পাউন্ডার। সব রোগের চিকিৎসায় তিনি সাদা কাগজে চিকিৎসাপত্র লিখে দিচ্ছেন। এমনকি উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে খামারির মালিকের বাড়িতে গিয়ে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে পশুর চিকিৎসা দিয়ে আসছেন এই কম্পাউন্ডার। যে কারণে প্রতিদিন উপজেলায় অকালে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছে  অনেক পশু।