Dhaka 1:24 am, Monday, 20 May 2024

আদমদীঘিতে মজুরি বৈষম্যের শিকার নারী শ্রমিকরা

বৈশাখ মাসের তপ্ত রোদে বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলার একটি ইঁটভাটায় মাটি কাটার কাজ করছিলেন ছালেহা খাতুন (৫২)। ট্রাকে করে ভাটায় আনা মাটি ডালিতে ভরে ভাটা পর্যন্ত নিয়ে যান। তপ্ত রোদে সকাল সাতটা থেকে বিকেল পর্যন্ত এ কাজ করেন রোকেয়া (৪৫)। ১০ ঘন্টার এই কাজ শেষে মজুরি পান  মাত্র ২৫০ টাকা। রোকেয়া বেগমের সঙ্গে ওই ভাটায় মাটি কাটার কাজ করেন সামসুল আলম (৪২)। একই কাজ করে তাঁর মজুরি ৪০০ টাকা। দীর্ঘসময় কাজ করেও কম মজুরি ও বৈষম্যের এমন চিত্র বগুড়া জেলার আদমদীঘি উপজেলার বেশিরভাগ ইটভাটায়। পুরুষের সঙ্গে সমান কাজ করেও নারীকে মজুরি প্রায় তিন গুন কম। এ নিয়ে তাঁরা কখনো আপত্তি করেন না বলে দাবি ইট ভাটার বিভিন্ন  মালিকদের। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে,এই উপজেলায় নারী শ্রমিকদের মজুরির এ বৈষম্যের চিত্র শুধু ইটভাটাতে নয়, গ্রহকর্মি, কৃষি, খেতখামার, বাড়ি নির্মাণে, কলখারখানাতেও।
বছরের পর বছর নারীরা এই বৈষম্যের মধ্যেও তার কাজ করে যাচ্ছেন।  আদমদীঘি উপজেলার শাঁওইল বাজারে গড়ে উঠেছে কয়েকশত তাঁত কারখানা। ঝুট কাপড় থেকে রং আলাদাসহ কম্বল তৈরির কাজে যুক্ত কয়েক শ নারী ও পুরুষ শ্রমিক। শাঁওইলের সুতার আড়ত কিংবা তাঁত কারখানায় একজন পুরুষ শ্রমিক কাজ করে মজুরি পান ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা। আর নারী শ্রমিকের মজুরি গড়ে ১৫০ থেকে ২০০ টাকা। শাঁওইল বাজারের একটি সুতার আড়তে কাজ করেন নারী শ্রমিক আকলিমা খাতুন (৪৬)। তাঁর বাড়ি সান্তাহারের কলসা রথবাড়ি মহল্লায়। প্রতিদিন ভোরে এখানে কাজ করতে আসেন তিনি। সারাদিন কাজ করে মজুরি পান তিনি ২৬০ টাকা। যাতায়াত বাবদ তাঁর ২৫ টাকা খরচ হয়। আরেক নারী শ্রমিক মাসুদা বেগম বলেন, তাঁর স্বামী সুজন আলী পেশায় একজন নির্মাণ শ্রমিক। বাড়িতে দুটি মেয়ে আছে। স্বামীর একার উপার্জনে সংসার ঠিকমত চলে না। ১০ বছর আগে ৪০ টাকা মজুরিতে এখানে কাজ শুরু করেন। বর্তমানে ২২০ টাকা পেটে খাওয়া, যাতায়াত বাদ দিয়ে দিনে শ খানেক টাকা হাতে থাকে। সূউপজেলায় আছে প্রায় শতাধিক কাজের নারী গৃহ শ্রমিক বা বুয়া। এরা ্ধসঢ়;এক মাস কাজ করে পায় ১৫০০ থেকে ১৮০০ টাকা মত। অথচ একজন পুরুষ শ্রমিক কোন গৃহস্থালী এক দিনের কাজেই পায় ৫০০/৬০০ টাকা। বাড়ি নির্মাণ কাজে ছাদ ঢালাইয়ে কাজ করে উপজেলায় প্রায় শতাধিক নারী শ্রমিক। এখানেও আছে নারী-পুরুষের শ্রমের মজুরীর বৈষম্য। খাদ্যভান্ডার হিসেবে খ্যাত আদমদীঘিতে রয়েছে ৭০/৮০টি চালকল। এসব চালকলে কাজ করেন।
কয়েক শত শ্রমিক। কাজ ভেদে চাতাল বা চালকলেও পুরুষ শ্রমিকদের মজুরির তুলনায় নারী শ্রমিকরা কম মজুরি পায়। বাড়ি নির্মাণ শ্রমিকদের ক্ষেত্রেও পুরুষ শ্রমিকদের তুলনায় নারী শ্রমিকরা কম মজুরি পায়। সান্তাহারে মশারী কারখানা আছে ৩/৪ টি। এসব কারখানায় কাজ করে কয়েকশত নারী কর্মি। মজুরী নিয়ে ক্ষোভ আছে তাঁদেরও। এ বিষয়ে নারী আইনজীবী ও নারী নেত্রী মিনা বেগম জানাননারীর প্রতি পুরুষতান্ত্রিক সমাজের যত দিন দৃষ্টিভঙ্গি ও মানসিকতার পরিবর্তন না হবে, ততদিন এভাবে শোষণ ও বৈষম্যের শিকার হতেই থাকবে। একই কর্মঘন্টা কাজ করে পুরুষেরা যেখানে ৪৫০ টাকা থেকে ৫০০ টাকা মজুরী পান, সেখানে একই পরিশ্রম দিয়ে নারীরা মাত্র ২২০ টাকা বা কম পাবে কেন? বৈষম্য ঘোচাতে নারীদের প্রতিবাদী হতে হবে, সমান মজুরী আদায়ে সোচ্চার হতে হবে।

One thought on “আদমদীঘিতে মজুরি বৈষম্যের শিকার নারী শ্রমিকরা

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

আপডেট সংবাদ

আদমদীঘিতে মজুরি বৈষম্যের শিকার নারী শ্রমিকরা

Update Time : 04:30:39 pm, Tuesday, 7 May 2024
বৈশাখ মাসের তপ্ত রোদে বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলার একটি ইঁটভাটায় মাটি কাটার কাজ করছিলেন ছালেহা খাতুন (৫২)। ট্রাকে করে ভাটায় আনা মাটি ডালিতে ভরে ভাটা পর্যন্ত নিয়ে যান। তপ্ত রোদে সকাল সাতটা থেকে বিকেল পর্যন্ত এ কাজ করেন রোকেয়া (৪৫)। ১০ ঘন্টার এই কাজ শেষে মজুরি পান  মাত্র ২৫০ টাকা। রোকেয়া বেগমের সঙ্গে ওই ভাটায় মাটি কাটার কাজ করেন সামসুল আলম (৪২)। একই কাজ করে তাঁর মজুরি ৪০০ টাকা। দীর্ঘসময় কাজ করেও কম মজুরি ও বৈষম্যের এমন চিত্র বগুড়া জেলার আদমদীঘি উপজেলার বেশিরভাগ ইটভাটায়। পুরুষের সঙ্গে সমান কাজ করেও নারীকে মজুরি প্রায় তিন গুন কম। এ নিয়ে তাঁরা কখনো আপত্তি করেন না বলে দাবি ইট ভাটার বিভিন্ন  মালিকদের। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে,এই উপজেলায় নারী শ্রমিকদের মজুরির এ বৈষম্যের চিত্র শুধু ইটভাটাতে নয়, গ্রহকর্মি, কৃষি, খেতখামার, বাড়ি নির্মাণে, কলখারখানাতেও।
আরো পড়ুন:আদমদীঘিতে বৃষ্টির আশায় ব্যতিক্রম ব্যাঙের বিয়ে
বছরের পর বছর নারীরা এই বৈষম্যের মধ্যেও তার কাজ করে যাচ্ছেন।  আদমদীঘি উপজেলার শাঁওইল বাজারে গড়ে উঠেছে কয়েকশত তাঁত কারখানা। ঝুট কাপড় থেকে রং আলাদাসহ কম্বল তৈরির কাজে যুক্ত কয়েক শ নারী ও পুরুষ শ্রমিক। শাঁওইলের সুতার আড়ত কিংবা তাঁত কারখানায় একজন পুরুষ শ্রমিক কাজ করে মজুরি পান ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা। আর নারী শ্রমিকের মজুরি গড়ে ১৫০ থেকে ২০০ টাকা। শাঁওইল বাজারের একটি সুতার আড়তে কাজ করেন নারী শ্রমিক আকলিমা খাতুন (৪৬)। তাঁর বাড়ি সান্তাহারের কলসা রথবাড়ি মহল্লায়। প্রতিদিন ভোরে এখানে কাজ করতে আসেন তিনি। সারাদিন কাজ করে মজুরি পান তিনি ২৬০ টাকা। যাতায়াত বাবদ তাঁর ২৫ টাকা খরচ হয়। আরেক নারী শ্রমিক মাসুদা বেগম বলেন, তাঁর স্বামী সুজন আলী পেশায় একজন নির্মাণ শ্রমিক। বাড়িতে দুটি মেয়ে আছে। স্বামীর একার উপার্জনে সংসার ঠিকমত চলে না। ১০ বছর আগে ৪০ টাকা মজুরিতে এখানে কাজ শুরু করেন। বর্তমানে ২২০ টাকা পেটে খাওয়া, যাতায়াত বাদ দিয়ে দিনে শ খানেক টাকা হাতে থাকে। সূউপজেলায় আছে প্রায় শতাধিক কাজের নারী গৃহ শ্রমিক বা বুয়া। এরা ্ধসঢ়;এক মাস কাজ করে পায় ১৫০০ থেকে ১৮০০ টাকা মত। অথচ একজন পুরুষ শ্রমিক কোন গৃহস্থালী এক দিনের কাজেই পায় ৫০০/৬০০ টাকা। বাড়ি নির্মাণ কাজে ছাদ ঢালাইয়ে কাজ করে উপজেলায় প্রায় শতাধিক নারী শ্রমিক। এখানেও আছে নারী-পুরুষের শ্রমের মজুরীর বৈষম্য। খাদ্যভান্ডার হিসেবে খ্যাত আদমদীঘিতে রয়েছে ৭০/৮০টি চালকল। এসব চালকলে কাজ করেন।
আরো পড়ুন:আদমদীঘিতে চাকুসহ যুবক গ্রেপ্তার
কয়েক শত শ্রমিক। কাজ ভেদে চাতাল বা চালকলেও পুরুষ শ্রমিকদের মজুরির তুলনায় নারী শ্রমিকরা কম মজুরি পায়। বাড়ি নির্মাণ শ্রমিকদের ক্ষেত্রেও পুরুষ শ্রমিকদের তুলনায় নারী শ্রমিকরা কম মজুরি পায়। সান্তাহারে মশারী কারখানা আছে ৩/৪ টি। এসব কারখানায় কাজ করে কয়েকশত নারী কর্মি। মজুরী নিয়ে ক্ষোভ আছে তাঁদেরও। এ বিষয়ে নারী আইনজীবী ও নারী নেত্রী মিনা বেগম জানাননারীর প্রতি পুরুষতান্ত্রিক সমাজের যত দিন দৃষ্টিভঙ্গি ও মানসিকতার পরিবর্তন না হবে, ততদিন এভাবে শোষণ ও বৈষম্যের শিকার হতেই থাকবে। একই কর্মঘন্টা কাজ করে পুরুষেরা যেখানে ৪৫০ টাকা থেকে ৫০০ টাকা মজুরী পান, সেখানে একই পরিশ্রম দিয়ে নারীরা মাত্র ২২০ টাকা বা কম পাবে কেন? বৈষম্য ঘোচাতে নারীদের প্রতিবাদী হতে হবে, সমান মজুরী আদায়ে সোচ্চার হতে হবে।