গত ১৭ মে বিশ্বজুড়ে পালিত হলো উচ্চ রক্তচাপ দিবস। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য বিষয় ছিল ‘সঠিকভাবে রক্তচাপ মাপুন, নিয়ন্ত্রণে রাখুন এবং দীর্ঘজীবী হোন’। উচ্চ রক্তচাপ ও এর চিকিৎসা নিয়ে আমাদের সমাজে আছে নানা ধরনের বিভ্রান্তি ও অহেতুক ভীতি। আসুন, এ সম্পর্কে জেনে নিই এবং সচেতন হই। বয়স হলে রক্তচাপ একটু বাড়তেই পারে। এতে ক্ষতি নেই। অনেকেরই রক্তচাপ মাপলে স্বাভাবিকের চেয়ে একটু বেশিই পাওয়া যায়। একে অনেকে পাত্তা দিতে চান না। তাদের ধারণা, বয়স বাড়লে রক্তচাপ একটু বেশিই থাকতে পারে, এর চিকিৎসার দরকার নেই। সিস্টোলিক ১৪০ ও ডায়াস্টোলিক ৯০ মিমি পারদ হলে একে বলে প্রাক-উচ্চ রক্তচাপ। এ সময় জীবনযাত্রার পরিবর্তন আনতে বলা হয়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ওষুধ লাগে না। কিন্তু এর বেশি হলে ও ক্রমাগত পাওয়া গেলে অবশ্যই ওষুধ সেবন করতে হবে।
উচ্চ রক্তচাপ হলো নীরব ঘাতক। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে না থাকলে এ থেকে হৃদরোগ, হার্ট ফেইলিউর, কিডনি ফেইলিউর, অন্ধত্ব, স্ট্রোকসহ নানা জটিলতা দেখা দিতে পারে। আমার কোনো উপসর্গ নেই। তাই উচ্চ রক্তচাপও নেইÑ বেশির ভাগ ক্ষেত্রে উচ্চ রক্তচাপের কোনো উপসর্গ হয় না; যদি না বড় কোনো জটিলতা হয় বা অনেক বেশি রক্তচাপ দেখা যায়। অর্ধেকের বেশি উচ্চ রক্তচাপের রোগী জানেনই না যে, তাদের উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে। তাই নিয়মিত রক্তচাপ মাপতে হবে এবং বেশি হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
ভ্রান্ত ধারণা : রক্তচাপ স্বাভাবিক, তাই আর ওষুধ দরকার নেই। উচ্চ রক্তচাপ শনাক্ত হওয়ার পর কিছুদিন ওষুধ সেবন করলে রক্তচাপ স্বাভাবিক হয়ে আসে। তখন অনেকে ওষুধ সেবন বন্ধ করে দেন। তাদের ধারণা, যেহেতু রক্তচাপ স্বাভাবিক হয়ে গেছে, তাই আর ওষুধ দরকার নেই। কিন্তু কিছু বিশেষ পরিস্থিতি ছাড়া উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ কখনো বন্ধ করা যাবে না, মাত্রা বা ধরন পরিবর্তিত হতে পারে।
আরও পড়ুন:আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে সাঁওতাল নারীদের ব্যতিক্রমী আয়োজন
উচ্চ রক্তচাপ আছে, তাই স্যালাইন খাওয়া যাবে না : ডায়রিয়া, বমি, পানিশূন্যতা বা লবণশূন্যতা হলে খাওয়ার স্যালাইন খেতে হয়। কিন্তু উচ্চ রক্তচাপের রোগী ভাবেন, তার স্যালাইন খাওয়া নিষেধ। কিন্তু এসব জরুরি পরিস্থিতিতে পানি ও লবণশূন্যতা পূরণ করা আগে জরুরি। তাই দরকারে স্যালাইন খেতে নিষেধ নেই।
লবণ ভেজে খাওয়া যাবে : উচ্চ রক্তচাপের রোগীকে বাড়তি বা কাঁচা লবণ খেতে নিষেধ করা হয়। এজন্য অনেকে লবণ ভেজে খান। আবার অনেকে সাধারণ লবণের পরিবর্তে পিংক সল্ট বা অন্যান্য লবণ খান। কিন্তু বাড়তি লবণ যেভাবেই খান, তা রক্তচাপ বাড়ায়।
ওষুধ : অনেকে ওষুধের দোকানদারের পরামর্শক্রমে বা আত্মীয়স্বজনের কথামতো উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ সেবন করেন। অমুক এ ওষুধ খেয়ে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রেখেছে, তাই ভাবেন একই ওষুধ নিজের জন্যও ভালো হবে। এ প্রবণতা ক্ষতিকর। কারণ চিকিৎসক বয়স, লিঙ্গ, আনুষঙ্গিক অন্যান্য রোগ সবকিছু বিবেচনা করে ওষুধ বাছাই করে থাকেন।
লেখক : ইমেরিটাস অধ্যাপক এবং প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক