Dhaka 6:17 pm, Thursday, 4 July 2024

নিষিদ্ধ ব্রাহামা গরুর নথিপত্রের খোঁজে বিমানবন্দরে দুদক

সাদিক অ্যাগ্রোর আমদানি করা নিষিদ্ধ ব্রাহামা জাতের গরুর তালিকাসহ সংশ্লিষ্ট নথিপত্র জব্দে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে গেছে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) একটি টিম।

আরো পড়ুন:মুহুরী নদীর পানি বিপৎসীমার ওপরে

মঙ্গলবার (২ জুলাই) দুদকের সহকারী পরিচালক আবুল কালামের নেতৃত্বে একটি টিম বিমানবন্দরের ঢাকা কাস্টমস অফিসে গেছেন বলে জানা গেছে।বিষয়টি নিশ্চিত করে দুদক উপপরিচালক (জনসংযোগ) আকতারুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, ২০২১ সালের জুলাই মাসে যুক্তরাষ্ট্র থেকে টার্কিশ এয়ারলাইন্সে করে ১৮টি ব্রাহমা গরু দেশে আনে সাদিক এগ্রো। জাল নথি দিয়ে ওই গরু আমদানির পর তা জব্দ করে দেখভালের দায়িত্ব দেওয়া হয় সরকারি গো প্রজনন ও দুগ্ধ খামারকে। মূলত ওই জব্দ তালিকা ও আইনগত কি কি পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল সেই সংক্রান্ত কাগজপত্র সংগ্রহ করতেই বিমানবন্দরে গেছে দুদক টিম।সোমবার (১ জুলাই) দুদকের সহকারী পরিচালক আবুল কালামের নেতৃত্বে ১৫ সদস্যের পৃথক তিনটি টিম সাদিক অ্যাগ্রোকে অনৈতিক সুবিধা দেওয়ার অভিযোগে সাভার কেন্দ্রীয় গো প্রজনন ও দুগ্ধ খামার এবং সাদিক এগ্রোর সাভার, মোহাম্মদপুর ও নরসিংদী ফার্মে দিনভর অভিযান চালিয়েছে। অভিযানে গরুর মাংস বিতরণ ও ৬০০ টাকা কেজি হিসাবে বিক্রির টাকা সরকারি কোষাগারে জমা নিয়েও নয়ছয়ের প্রাথমিক প্রমাণ মিলেছে।অভিযান সম্পর্কে উপপরিচালক মো. আকতারুল ইসলাম বলেন, সাদেক অ্যাগ্রোকে অনৈতিক সুবিধা দেওয়ার অভিযোগে সাভার কেন্দ্রীয় গো প্রজনন ও দুগ্ধ খামারে অভিযান চালানো হয়েছে। এছাড়া সাদিক অ্যাগ্রোর সাভার, মোহাম্মদপুর ও নরসিংদী ফার্মেও অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় গো প্রজনন ও দুগ্ধ খামারের দায়িত্বরত কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদ ও প্রয়োজনীয় নথিপত্র টিম সংগ্রহ করেছে। এছাড়া সাদিক অ্যাগ্রোর সাভারের ফার্মে দুই শতাধিক বিদেশি গরুর সন্ধান পাওয়া গেছে। এর মধ্যে নিষিদ্ধ ব্রাহমা জাতের গরুর ৭টি বাছুরও রয়েছে। দুদকের গাজীপুর সমন্বিত জেলা কার্যালয় থেকে আরেকটি টিম সাদিক অ্যাগ্রোর নরসিংদীর ফার্মে অভিযান চালিয়েছে। তবে ওই অভিযানে তেমন কিছু পাওয়া যায়নি। ফার্মটি ফাঁকা পাওয়া গেছে।অন্যদিকে অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়া দুদকের সহকারী পরিচালক আবুল কালাম আজাদ গণমাধ্যমকে বলেন, ২০২১ সালে বিদেশ পথে আসা নিষিদ্ধ ব্রাহমা প্রজাতির গরু কাস্টমস থেকে জব্দ করা হয়। সেগুলোকে পরে লালন-পালনের জন্য সাভারের কেন্দ্রীয় গো-প্রজনন ও দুগ্ধ খামারে পাঠানো হয়। সেখান থেকে গত রোজার ঈদে গরুগুলোর মাংস বিক্রির জন্য কমিটি করা হয় এবং মাংস বিক্রি করা হয়। অভিযানে সাভারে এসে একটি শেডে ৫টি ব্রাহমা প্রজাতির গরু ও ৭টি বাছুরের সন্ধান মিলেছে। এরপর একটি ঘরে ১৫ লাখ টাকা দামের আলোচিত সেই ছাগলটি পাওয়া গেছে। অভিযানে বেশকিছু তথ্য ও নথিপত্র সংগ্রহ করা হয়েছে। অভিযানের প্রাপ্ত বিস্তারিত তথ্য শিগগিরই প্রতিবেদন আকারে কমিশনে দাখিল করা হবে।

আরো পড়ুন:৩০ জুন বিশ্ববিদ্যালয় চালু-বন্ধের বিষয়ে সিদ্ধান্ত

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, মহামারির বিধিনিষেধের মধ্যে ১৮টি ব্রাহমা গরু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি হয়। কিন্তু গরুগুলো গ্রহণ করার জন্য শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কর্তৃপক্ষের কেউ যায়নি। পরে জানা যায়, ওই গরুগুলোর আমদানিকারক সাদিক অ্যাগ্রো লিমিটেড। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের জাল কাগজপত্র ব্যবহার করে ওই গরু আমদানি করা হয়েছিল। অথচ বাংলাদেশ মাংস উৎপাদনে স্বনির্ভরতা অর্জনের পর সরকার ২০১৬ সালে ব্রাহমা জাতের গরু আমদানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে।সূত্র আরো জানায়, ২০২১ সালের জুলাই মাসে যুক্তরাষ্ট্র থেকে টার্কিশ এয়ারলাইন্সে করে ১৮টি ব্রাহমা গরু দেশে আনে সাদিক এগ্রো। এগুলোর মধ্যে একটি গরু আকাশপথেই মারা যায়। সে সময় সাদিক এগ্রো তিনটি জাল নথি জমা দিয়েছিল। এগুলো হলো- গবাদিপশু আমদানি সংক্রান্ত একটি নো অবজেকশন সার্টিফিকেট (এনওসি), প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের প্রাণী কোয়ারেন্টাইন বিভাগের কাছ থেকে একটি চিঠি এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে গবাদিপশু আমদানির অনুমতিপত্র। এর প্রতিটিই জাল হিসেবে চিহ্নিত করেন শুল্ক কর্মকর্তারা। জাল নথি দিয়ে গরু আনার ঘটনায় ওই সময় মামলা হয়। আদালতের রায় আসে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের পক্ষে। ফলে ওই ১৭টি ব্রাহমা গরু বাজেয়াপ্ত করে রাখা হয় কেন্দ্রীয় গো প্রজনন ও দুগ্ধ খামারে। ২০২১ সালের জুলাই থেকে ২০২৪ সালের মার্চ পর্যন্ত রাখা হয় ওই সরকারি খামারে। আর সেই নিষিদ্ধ ঘোষিত ব্রাহমা জাতের একাধিক গরু সাদিক অ্যাগ্রোতে থাকাসহ গরু চোরাচালানের অভিযোগ ছিল সাদিক অ্যাগ্রোর বিরুদ্ধে।

One thought on “নিষিদ্ধ ব্রাহামা গরুর নথিপত্রের খোঁজে বিমানবন্দরে দুদক

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

বোটানিক্যাল গার্ডেনে প্রবেশ ফি ১০০ টাকা অযৌক্তিক : পরিবেশমন্ত্রী

নিষিদ্ধ ব্রাহামা গরুর নথিপত্রের খোঁজে বিমানবন্দরে দুদক

Update Time : 04:13:37 pm, Tuesday, 2 July 2024

সাদিক অ্যাগ্রোর আমদানি করা নিষিদ্ধ ব্রাহামা জাতের গরুর তালিকাসহ সংশ্লিষ্ট নথিপত্র জব্দে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে গেছে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) একটি টিম।

আরো পড়ুন:মুহুরী নদীর পানি বিপৎসীমার ওপরে

মঙ্গলবার (২ জুলাই) দুদকের সহকারী পরিচালক আবুল কালামের নেতৃত্বে একটি টিম বিমানবন্দরের ঢাকা কাস্টমস অফিসে গেছেন বলে জানা গেছে।বিষয়টি নিশ্চিত করে দুদক উপপরিচালক (জনসংযোগ) আকতারুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, ২০২১ সালের জুলাই মাসে যুক্তরাষ্ট্র থেকে টার্কিশ এয়ারলাইন্সে করে ১৮টি ব্রাহমা গরু দেশে আনে সাদিক এগ্রো। জাল নথি দিয়ে ওই গরু আমদানির পর তা জব্দ করে দেখভালের দায়িত্ব দেওয়া হয় সরকারি গো প্রজনন ও দুগ্ধ খামারকে। মূলত ওই জব্দ তালিকা ও আইনগত কি কি পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল সেই সংক্রান্ত কাগজপত্র সংগ্রহ করতেই বিমানবন্দরে গেছে দুদক টিম।সোমবার (১ জুলাই) দুদকের সহকারী পরিচালক আবুল কালামের নেতৃত্বে ১৫ সদস্যের পৃথক তিনটি টিম সাদিক অ্যাগ্রোকে অনৈতিক সুবিধা দেওয়ার অভিযোগে সাভার কেন্দ্রীয় গো প্রজনন ও দুগ্ধ খামার এবং সাদিক এগ্রোর সাভার, মোহাম্মদপুর ও নরসিংদী ফার্মে দিনভর অভিযান চালিয়েছে। অভিযানে গরুর মাংস বিতরণ ও ৬০০ টাকা কেজি হিসাবে বিক্রির টাকা সরকারি কোষাগারে জমা নিয়েও নয়ছয়ের প্রাথমিক প্রমাণ মিলেছে।অভিযান সম্পর্কে উপপরিচালক মো. আকতারুল ইসলাম বলেন, সাদেক অ্যাগ্রোকে অনৈতিক সুবিধা দেওয়ার অভিযোগে সাভার কেন্দ্রীয় গো প্রজনন ও দুগ্ধ খামারে অভিযান চালানো হয়েছে। এছাড়া সাদিক অ্যাগ্রোর সাভার, মোহাম্মদপুর ও নরসিংদী ফার্মেও অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় গো প্রজনন ও দুগ্ধ খামারের দায়িত্বরত কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদ ও প্রয়োজনীয় নথিপত্র টিম সংগ্রহ করেছে। এছাড়া সাদিক অ্যাগ্রোর সাভারের ফার্মে দুই শতাধিক বিদেশি গরুর সন্ধান পাওয়া গেছে। এর মধ্যে নিষিদ্ধ ব্রাহমা জাতের গরুর ৭টি বাছুরও রয়েছে। দুদকের গাজীপুর সমন্বিত জেলা কার্যালয় থেকে আরেকটি টিম সাদিক অ্যাগ্রোর নরসিংদীর ফার্মে অভিযান চালিয়েছে। তবে ওই অভিযানে তেমন কিছু পাওয়া যায়নি। ফার্মটি ফাঁকা পাওয়া গেছে।অন্যদিকে অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়া দুদকের সহকারী পরিচালক আবুল কালাম আজাদ গণমাধ্যমকে বলেন, ২০২১ সালে বিদেশ পথে আসা নিষিদ্ধ ব্রাহমা প্রজাতির গরু কাস্টমস থেকে জব্দ করা হয়। সেগুলোকে পরে লালন-পালনের জন্য সাভারের কেন্দ্রীয় গো-প্রজনন ও দুগ্ধ খামারে পাঠানো হয়। সেখান থেকে গত রোজার ঈদে গরুগুলোর মাংস বিক্রির জন্য কমিটি করা হয় এবং মাংস বিক্রি করা হয়। অভিযানে সাভারে এসে একটি শেডে ৫টি ব্রাহমা প্রজাতির গরু ও ৭টি বাছুরের সন্ধান মিলেছে। এরপর একটি ঘরে ১৫ লাখ টাকা দামের আলোচিত সেই ছাগলটি পাওয়া গেছে। অভিযানে বেশকিছু তথ্য ও নথিপত্র সংগ্রহ করা হয়েছে। অভিযানের প্রাপ্ত বিস্তারিত তথ্য শিগগিরই প্রতিবেদন আকারে কমিশনে দাখিল করা হবে।

আরো পড়ুন:৩০ জুন বিশ্ববিদ্যালয় চালু-বন্ধের বিষয়ে সিদ্ধান্ত

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, মহামারির বিধিনিষেধের মধ্যে ১৮টি ব্রাহমা গরু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি হয়। কিন্তু গরুগুলো গ্রহণ করার জন্য শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কর্তৃপক্ষের কেউ যায়নি। পরে জানা যায়, ওই গরুগুলোর আমদানিকারক সাদিক অ্যাগ্রো লিমিটেড। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের জাল কাগজপত্র ব্যবহার করে ওই গরু আমদানি করা হয়েছিল। অথচ বাংলাদেশ মাংস উৎপাদনে স্বনির্ভরতা অর্জনের পর সরকার ২০১৬ সালে ব্রাহমা জাতের গরু আমদানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে।সূত্র আরো জানায়, ২০২১ সালের জুলাই মাসে যুক্তরাষ্ট্র থেকে টার্কিশ এয়ারলাইন্সে করে ১৮টি ব্রাহমা গরু দেশে আনে সাদিক এগ্রো। এগুলোর মধ্যে একটি গরু আকাশপথেই মারা যায়। সে সময় সাদিক এগ্রো তিনটি জাল নথি জমা দিয়েছিল। এগুলো হলো- গবাদিপশু আমদানি সংক্রান্ত একটি নো অবজেকশন সার্টিফিকেট (এনওসি), প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের প্রাণী কোয়ারেন্টাইন বিভাগের কাছ থেকে একটি চিঠি এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে গবাদিপশু আমদানির অনুমতিপত্র। এর প্রতিটিই জাল হিসেবে চিহ্নিত করেন শুল্ক কর্মকর্তারা। জাল নথি দিয়ে গরু আনার ঘটনায় ওই সময় মামলা হয়। আদালতের রায় আসে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের পক্ষে। ফলে ওই ১৭টি ব্রাহমা গরু বাজেয়াপ্ত করে রাখা হয় কেন্দ্রীয় গো প্রজনন ও দুগ্ধ খামারে। ২০২১ সালের জুলাই থেকে ২০২৪ সালের মার্চ পর্যন্ত রাখা হয় ওই সরকারি খামারে। আর সেই নিষিদ্ধ ঘোষিত ব্রাহমা জাতের একাধিক গরু সাদিক অ্যাগ্রোতে থাকাসহ গরু চোরাচালানের অভিযোগ ছিল সাদিক অ্যাগ্রোর বিরুদ্ধে।