আপনারা বিভাগ পাইলেন না এটা আপনাদের কপালের দোষ। আপনাদের জেলার নাম কুমিল্লা। কুমিল্লা জেলা টা কি আমাজন জঙ্গল থেকে এখানে এসে পড়েছে?
এটা কি বাংলাদেশের অংশ নয়? মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে এবং ২৪ এর যুদ্ধে কুমিল্লার কি ভূমিকা নেই? যদি ভূমিকা থেকেই থাকে তাহলে কুমিল্লা নামে বিভাগ দিতে অসুবিধা কোথায়? কেন সেটা আটকে রেখেছিলেন? সাবেক স্বৈরাচারী শাসক শেখ হাসিনা কুমিল্লাকে বিভাগ না দিয়ে ব্যঙ্গাত্ত করে অপমান করে কথা বলায় এসব কথা বলেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডাঃ শফিকুর রহমান।
তিনি বলেন, শেখ মুজিবুর রহমান দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছেন। তার সু-কীর্তি অথবা অন্য কিছু সেটার মূল্যায়ন জনগণ করেছে, করবে, করতে থাকুক। কিন্তু আপনি সে জায়গার জের ধরে আপনি কুমিল্লায় বিভাগ দিবেন না, একটা জেলাকে তার নাম ধরে অপমান করবেন। আপনি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হতে পারেন না। বাংলাদেশের যিনি প্রধানমন্ত্রী হবেন তাকে বাংলাদেশের প্রতি ইঞ্চি জায়গা কে সম্মান করতে হবে। এটা একটা জুলুম। অনেকগুলো জুলুমের মধ্যে এটা ও একটা জুলুম। আমরা বর্তমান সরকারকে অনুরোধ করবো বিভাগের জন্য তো সবকিছু রেডি আছে। মেহেরবানী করে তাদের এই চাওয়াটা পূরণ করে দেন। গতকাল ৬ ডিসেম্বর শুক্রবার সকাল ১০ টায় টাউন হল মাঠে আয়োজিত বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী কুমিল্লা মহানগরী শাখার কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
তিনি আরো বলেন,
নামের জন্য কুমিল্লা বাসী যুদ্ধ করেনাই। বলেনাই সুরমা নদীর নামে করেন, বলে নাই কুশিয়ারার নামে করেন, তিতাসের নামে করেন। এটার নামে করেন ওটার নামে করেন কুমিল্লা মানুষ এটা বলেনি। বলেছে আমাদের নামেই, আমাদের পরিচয়েই আমাদের বিভাগটা দিয়ে দেন এবং কি নোয়াখালীর লোকেরাও বলেনি লক্ষীপুর নামে বিভাগটা দিয়ে দেন, নোয়াখালীর নামে দেন, ফেনী নামে দেন, তা ও তারা বলে নাই। তারা যদি না বলে তাহলে কুমিল্লা নামে বিভাগ হবে না কেন? বিভাগ হওয়া উচিত। বরঞ্চ আর একটা ধারণা হওয়া উচিত যে নামের প্রতি অপমান করা হয়েছে যত তাড়াতাড়ি পারেন বিভাগটা দিয়ে তাদের সম্মান টা ফিরিয়ে দেন।
আমীরে জামায়াত বলেন,
আমরা এমন একটি বাংলাদেশ গঠন করতে চাই যে বাংলাদেশে কোন বৈষম্য থাকবে না। আমরা আল্লাহর দরবারে বৈষম্য থেকে পানা চাই।
এখন এই বৈষম্যহীন দেশটা করবে কে?
প্রধানমন্ত্রী হলেই আমার বাড়ি যে জায়গায় বন্যার স্রোত, উন্নয়নের স্রোত চলে যাবে সেখানে। সারা বাংলাদেশের সম্পদ টেনেটুনে ওখানে ঢুকিয়ে দেওয়া হবে। তাহলে বৈষম্যহীন সমাজ হবে কেমনে?
যুক্তি হলো, সাবেক আমলে আমার এলাকা ছিল বঞ্চিত। এখন অতীতের কাজা কাপ্পাড়া সব আমার আদায় করতে হবে। আমরা কথা দিচ্ছি, ইনশাআল্লাহ, আল্লাহতায়ালা যদি জনগণের মনে ভালোবাসা আমাদের প্রতি সমর্থন তৈরি করে করে দেয় তাহলে আমরা এমন বাংলাদেশ গড়বো, যে বাংলাদেশে প্রধানমন্ত্রীর জেলার আগে অন্য জেলাতে চোখ দিয়ে দেখা হবে ইনশাআল্লাহ। তবে প্রধানমন্ত্রীর জেলা ও বঞ্চিত হবে না। তারাও তাদের ন্যায্য অধিকার পাবে ইনশাআল্লাহ।
যদি আল্লাহ তালা আমাদেরকে সুযোগ দেন, ইনশাআল্লাহ আমরা কথা দিচ্ছি আমরা দুর্নীতি করবো না দুর্নীতি হতে দেব না। ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত জামাতে ইসলামীর যেসব দেশ প্রেমিক নেতৃবৃন্দদের খুন করা হয়েছে বিচারিক আদালতে, তারা তো দুইজন তিন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেছেন। বাংলাদেশের কোন দুশমন ও তাদের হাতে দুর্নীতির গন্ধ লাগাইতে পারেনি। তার একটাই কারণ তারা আল্লাহকে ভয় করে।
তিনি বলেন,
যাদের হাতে আগামীতে দায়িত্ব আসবে তারা যেন আল্লাহকে ভয় করে চলে। যাদি আল্লাহকে ভয় করে তাহলে আল্লাহর ভয় আর দুর্নীতি দুইটা একসাথে চলতে পারে না। তখন দুর্নীতির মৃত্যু হবে এবং সু-নীতির জয় হবে ইনশাআল্লাহ।
যারা দেশ প্রেমের পক্ষে দাঁড়িয়েছেন, দেশটা কে শান্তির পক্ষে দাঁড়িয়েছেন এ স্বৈরাচারী সরকার তাদের উপরে সবচেয়ে বেশি। আঘাত করেছে। আঘাত করেছে আলেম ওলামার উপর এবং সাংবাদিকদের উপর। এরা হত্যা করতে কাউকে ছাড়ে নাই। হত্যার মিশন নিয়ে তারা নেমেছিল। আর তারা তাদের ক্ষমতার শেষ দিন পর্যন্ত জনগণকে হত্যা করেছে। এই ২৪ এর গণহত্যার এরা নায়ক নায়িকা। জাতি এদের বিচার চায়। এদের প্রত্যেকের বিচার চায় প্রত্যেকটি ঘটনার বিচার চায়। এর বিচার অবশ্যই করতে হবে তবে এবার এই পরিবর্তনের সাথে সাথে আমরা বলেছিলাম আমরা ব্যক্তিগতভাবে বা দলগত ভাবে কারো উপর কোন প্রতিশোধ নেব না আইন হাতে তুলে নেব না। প্রতিশোধ নেওয়া মানে হচ্ছে আইন হাতে তুলে নেওয়া।
আমরা আইন হাতে তুলে নেব না কিন্তু প্রত্যেকটি ঘটনার আমরা বিচার চাই।
বিচার যদি না হয় তাহলে বিচার হীনতায় সন্ত্রাসদের কে আরো সন্ত্রাস করার শক্তি যোগাবে। যদি আমরা আর সন্ত্রাসদের দেখতে না চাই তাহলে এই অপরাধ গুলোর বিচার হতে হবে। দেশ এবং বিদেশে আন্দোলনকারী জনতা জেলে রয়ে গেছেন। আমরা সরকারের কাছে দাবি জানাই অবিলম্বে তাদের মুক্তির ব্যবস্থা করে তাদেরকে সম্মানের সাথে হয় তাদের কর্মস্থলে সেখানে ফিরিয়ে দিন অথবা বাংলাদেশের সম্মানের সাথে ফিরিয়ে আনেন। এ যুদ্ধে দেশের সমস্ত মিডিয়া তারা চাইলেও সত্যের পক্ষে শক্ত করে দাঁড়াতে পারেনি, দুই একটা মিডিয়া যারা দাঁড়ানোর দুঃসাহস দেখিয়েছে তাদেরকে ঠান্ডা করা হয়েছে, দমন করা হয়েছে, তাদের ওপর নির্যাতন চালানো হয়েছে। কিন্তু বিদেশ থাকে ও আমাদের মিডিয়া যোদ্ধারা সমান তালে যুদ্ধ করে গেছে।
আমি তাদের সকলকে সম্মান জানাই।
আপনাদের কুমিল্লার একজন সন্তান। তিনি সেই যুদ্ধ করা শুরু করেছিলেন ১৫ বছর আগে, এখনো তিনি সেই যুদ্ধ অব্যাহত রেখেছেন। তাকে হয়তো আপনারা অনেকেই জানেন আবার অনেকেই জানেননা। এই কুমিল্লাতেই তার বাড়ি, ফেস দ্যা পিপলের পরিচালক সাইফুর রহমান সাগর।
তিনি সাইফুর সাগরের ভূয়সী প্রশংসা করে বলেন,
এখনো দেখবেন ভারতীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে তার মিডিয়াই সবচেয়ে বেশি সোচ্চার। তিনি উলঙ্গ করে দিচ্ছেন আসলেই কারা সাম্প্রদায়িক। তিনি প্রমাণ করে দিচ্ছেন বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িকতার দেশ নয়। এদেশে আমরা সকল ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সবাই মিলেমিশে আছি কারণ বাংলাদেশ আমাদের সবার। আমরা বাংলাদেশে কোন মেজরিটি মাইনোরিটি মানি না ।
এদেশে যারা ই জন্মগ্রহণ করেছে তারা এই বাংলাদেশে নাগরিক।
আজকে বাংলাদেশের সবাই সোচ্চার হয়েছেন। তারা দেখেছেন ভারতীয় হলুদ মিডিয়া যখন বাংলাদেশের বিরুদ্ধে নিকৃষ্ট যুদ্ধ শুরু করেছে। তখন জগন্নাথ হল থেকে আমাদের হিন্দু ভাইয়েরা বের হয়ে তার প্রতিবাদ করেছে। তারা জানিয়ে দিয়েছে, তোমরা যা প্রকাশ করছো অসত্য, তা মিথ্যা। আমাদের ব্যবহার করে তোমাদের স্বার্থ হাসিল করতে আমরা দেব না।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী কুমিল্লা মহানগরী শাখার আমীর কাজী দ্বীন মোহাম্মদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সাবেক এমপি ও কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির ডাঃ সৈয়দ আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, সহকারি সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এটিএম মাছুম ও মাওলানা আব্দুল হালিম, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য মুহাম্মদ আব্দুর রব, সাবেক চাকসু ভিপি ও কেন্দ্রীয় কর্ম পরিষদ সদস্য এড. জসিম উদ্দিন সরকার, কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আমির এড. মু. শাহজাহান, কুমিল্লা উত্তর জেলা আমির অধ্যাপক আব্দুল মতিন সহ আরো অন্যান্য কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতৃ