মাদারীপুর ডাসার উপজেলার গোপালপুর ইউনিয়ন পূয়ালি এলাকার মিলন মুন্সী ও আল আমিন মুন্সী চার মাস আগে অবৈধভাবে সমুদ্রপথে ইতালি যাওয়ার উদ্দেশ্য লিবিয়ার ভূমধ্যসাগরে নৌকাডুবিতে দুই ভাই মিলন মুন্সী ও আল আমিন মুন্সীর মৃত্যু হয়েছে। চার মাস পর বুধবার (৪ সেপ্টেম্বর) পরিবারে মৃত্যুর খবর আসলে কান্নায় ভেঙে পড়েন স্বজনরা।
দুই ভাইয়ের মৃত্যুর খবরে তাদের গ্রামের বাড়িতে নেমে এসেছে শোকের মাতম। এই ঘটনায় দালালের কঠোর শাস্তি দাবি করেছেন স্বজন ও এলাকাবাসী। এ বিষয়ে আইনগত অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের কথা জানিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন।
একসঙ্গে দুই সন্তানের মৃত্যুতে, এ শোক কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না মা মায়া বেগম। আহাজারিতে ভারী হয়ে উঠেছে আশপাশের পরিবেশ। দুই ভাইয়ের মৃত্যুর খবরে বাড়িতে ছুটে আসছেন এলাকার প্রতিবেশীরা। কোন ভাবেই থামছেনা স্বজনদের আহাজারি।
জানা যায়, ৭ মাস আগে ভাগ্যের চাকা ঘুরাতে অবৈধভাবে সমুদ্রপথে ইতালির উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেন মাদারীপুরের ডাসার উপজেলার গোপালপুর ইউনিয়নের পশ্চিম পূয়ারী গ্রামের সিরাজ মুন্সীর ছেলে মিলন মুন্সী (৩৫) ও আল আমিন মুন্সী (৩২)। মাঝপথে লিবিয়া গিয়ে তারা অবস্থান করেন।
পরে গত ২৭ এপ্রিল লিবিয়া থেকে ইঞ্জিনচালিত নৌকায় অর্ধশত মানুষের সঙ্গে ইতালির উদ্দেশ্যে যাত্রা করে দুই ভাই। ভূমধ্যসাগরে পৌঁছালে বহনকারী নৌকাডুবিতে সহোদরের মৃত্যু হয়। বিষয়টি দীর্ঘদিন গোপন থাকলেও চারমাস পর বুধবার সকালে মিলন ও আল আমিনের মৃত্যু খবর আসলে পরিবারে শুরু হয় শোকের মাতম।
স্বজনরা জানায়, মানবপাচারকারী চক্রের অন্যতম সদস্য গোপালপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফরহাদ মাতুব্বর সহজভাবে ইতালি নেয়ার প্রলোভন দেয়। এতে ধারদেনা করে ৩০ লাখ টাকা দালালের হাতে তুলে দেয় স্বজনরা। একদিকে স্বজন হারানোর শোক, অন্যদিকে ঋণের টাকা পরিশোধ নিয়ে দুশ্চিন্তায় দুই ভাইয়ের পরিবার। এই ঘটনায় জড়িত দালালের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন স্বজন ও এলাকাবাসী।
ঘটনার পর থেকে পলাতক রয়েছে অভিযুক্ত ফরহাদ মাতুব্বর। ইউনিয়ন পরিষদে গিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি। বিস্তারিত জানতে ইউপি চেয়ারম্যানের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন দিলে তার বন্ধ পাওয়া যায়। এদিকে নিহত মিলনের পরিবারে মা-বাবা স্ত্রী ও তিন বছরের এক ছেলে রয়েছে। আর আল আমিনের সংসারে স্ত্রী ও এক বছরের এক ছেলে রয়েছে।
ছেলেহারা মা মায়া বেগম বলেন, ফরহাদ চেয়ারম্যান প্রলোভন দেখিয়ে আমাদের কাছ থেকে ৩০ লাখ টাকা নেয়। তখন বলেছিল, সুন্দরভাবে আমার দুই ছেলেকে ইতালি পাঠাবে। কিন্তু এভাবে আমার দুই ছেলের মৃত্যু হবে, এটা মেনে নিতে পারছি না। এই ঘটনার বিচার চাই। আর ধারদেনা পরিশোধে সরকারের সহযোগিতা চাই।
মিলন ও আল আমিনের খালা আনোয়ারা বেগম বলেন, একসঙ্গে দুই ভাইয়ের মৃত্যু, এটা কিছুতেই মেনে নিতে পারছি না। পরিবারের উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিল ওই দুই ভাই। দালাল ফরহাদ মাতুব্বর এই ঘটনার জন্য দায়ী, এর বিচার চাই।
এবিষয়ে সুজন তালুকদার নামে একজন বলেন, দালাল ইউপি চেয়ারম্যান ফরহাদ মাতুব্বর দীর্ঘদিন ধরে এলাকার যুবকদের প্রলোভন দেখিয়ে বিদেশে পাঠানোর নাম করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। এই ফরহাদ মাতুব্বর মানবপাচার চক্রের শীর্ষ সক্রিয় সদস্য, তার বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ থাকলেও সবসময় ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকে সে। তার কঠিন বিচার দাবি করছি।
ডাসার থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, ইতালি যাবার পথে দুই ভাইয়ের মৃত্যুর খবরটি বিভিন্ন অনলাইনের মাধ্যমে জানতে পেরেছি। নিহতের পরিবার থেকে এখনও কোন অভিযোগ করেনি। অভিযোগ আসলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
ডাসার উপজেলা ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী কর্মকর্তা উত্তম কুমার দাশ জানান, মিলন ও আল আমিনের পরিবার থেকে এখনও এবিষয়টি প্রশাসনকে জানানো হয় নাই। তবে, খোঁজখবর নিয়ে দ্রুত আইনগত পদক্ষেপ নেয়া হবে। এছাড়া মানবপাচারের ঘটনায় ইউপি চেয়ারম্যান জড়িত থাকলে তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হবে।