Dhaka ০৯:৩০ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ০৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ২৬ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

তারকা ও বিলাসবহুল হোটেল ব্যবসায় ধস

দিনে ক্ষতি শতকোটি টাকা

দেশের বিলাসবহুল পাঁচতারকা হোটেল ও তারকা মানের হোটেল শিল্পে বড় ধাক্কা এসেছে; বৈশ্বিক মহামারী করোনাকালের মতোই এ খাত আক্রান্ত হয়েছে কোটা সংস্কার ছাত্র আন্দোলনের জেরে। দেশের অস্থিতিশীল পরিস্থিতি ও কারফিউর কারণে দেশি-বিদেশি কোনো পর্যটক আসছেন না তারকা হোটেলে; আসছেন না বিদেশি ক্রেতারা। এ ছাড়া বিদেশি অতিথিদের বুকিং বাতিলের পাশাপাশি দেশীয় বিভিন্ন ইভেন্ট ও অনুষ্ঠানও হচ্ছে না; বরং আগে করা বুকিং বাতিল হচ্ছে। অথচ ব্যয়ের খাত খোলা রয়েছে। অর্থাৎ আয় বন্ধের মধ্যেই ইউটিলিটি বিল, স্টাফদের বেতন ও ব্যাংকঋণের সুদ গুনতে হচ্ছে এ খাতের উদ্যোক্তাদের। ফলে প্রতিদিন শতকোটি টাকার ক্ষতি হচ্ছে। শুধু তাই নয়, ব্যবসা বন্ধপ্রায় থাকায় সরকারও বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাচ্ছে। উদ্ভূত পরিস্থিতি যত দীর্ঘায়িত হবে, এ খাতের অবস্থাও ততই বেহাল হবে। সব মিলিয়ে উদ্বিগ্ন এ খাতের উদ্যোক্তারা।

জানা গেছে, রাজধানীর পাঁচতারকাসহ অন্য তারকা হোটেলগুলো এখন প্রায় অতিথিশূন্য হয়ে পড়েছে। একের পর এক বাতিল হচ্ছে রুম ও অনুষ্ঠানের আগাম বুকিং। এমনকি এসব হোটেলে সেমিনার ও ওয়ার্কশপের মতো করপোরেট ইভেন্টগুলোও এখন বন্ধ আছে। বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল হোটেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিআইএইচএ) তথ্য বলছে, তারকা হোটেলগুলোতে অতিথি কমেছে প্রায় ৯০ শতাংশ। আর রুম বুকিং নেমে এসেছে ১০ শতাংশে। পর্যটনকেন্দ্র কক্সবাজারসহ সারাদেশে বিলাসবহুল হোটেলগুলোর চলতি জুলাই মাসের বাকি দিনগুলো ও আগস্টের কিছু দিনের জন্য রুম বুকিং বাতিল করেছেন অতিথিরা।

খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, ইন্টারনেট বন্ধের কারণে প্রায় এক সপ্তাহ বিদেশি অতিথিরা যোগাযোগ করতে পারেননি। এমনকি তারা হোটেল বুকিং, বাতিল কিছুই করতে পারেননি। এ ছাড়া বেশ কিছু দেশ বাংলাদেশে ভ্রমণ সতর্কতা জারি করেছে। পাশাপাশি ব্যবসায়িক সফরও স্থগিত করে। এতে বড় ধরনের ক্ষতির আশঙ্কা করছে হোটেল কর্তৃপক্ষ।

জানতে চাইলে বিআইএইচএ সভাপতি এবং চট্টগ্রামের হোটেল আগ্রাবাদের মালিক হাকিম আলী আমাদের সময়কে বলেন, করোনাকালের মতো ক্ষতির মুখে পড়েছে দেশের তারকা হোটেল শিল্প। বর্তমানে তারকা হোটেলগুলো প্রায় অতিথিশূন্য হয়ে পড়েছে। রুম বুকিং ১০-১৫ শতাংশে নেমে গেছে। অথচ স্বাভাবিক অবস্থায় এ সময়ে হোটেলগুলোর ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ অতিথি পূর্ণ থাকে। তিনি আরও বলেন, বিভিন্ন তারকা হোটেলে বাংলাদেশে অবস্থানকারী বিদেশি কিছু অতিথি দীর্ঘ মেয়াদে অবস্থান করেন। তারাও আতঙ্কে আছেন। এ অবস্থা চলতে থাকলে হোটেলগুলো একেবারে অতিথিশূন্য হয়ে পড়বে।

বিআইএইচএ সভাপতি আরও বলেন, তার হোটেলে রুম ভাড়া ও বুকিং বাতিলের কারণে প্রায় এক কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। এটি আরও বাড়বে। তিনি বলেন, সাধারণত এ সময়ে হোটেল বুকিং সন্তোষজনক থাকলেও বর্তমান পরিস্থিতি করোনাকালকে মনে করিয়ে দিচ্ছে। আমরা এখনো ব্যবসায়িক ক্ষতির হিসাব করতে পারিনি। তবে এতদিনে এই ক্ষতির পরিমাণ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে বলে আশঙ্কা করছি।

জানতে চাইলে ইউনিক হোটেল অ্যান্ড রিসোর্টস পিএলসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এবং বিআইএইচএ স্ট্যান্ডিং কমিটি ফর প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের কো-চেয়ারম্যান মো. শাখাওয়াত হোসেন আমাদের সময়কে বলেন, বর্তমানে তারকা হোটেলের ব্যবসা নেই বললেই চলে। প্রায় হোটেলই অতিথিশূন্য হয়ে পড়েছে। দেশে অস্থিতিশিল অবস্থা বিরাজ করায় বিদেশি অতিথিরা আসছেন না। পাশাপাশি দেশি অতিথিরাও আসছেন না। তদুপরি পার্টি ও অনুষ্ঠান ইত্যাদিও হচ্ছে না। নতুন করে বুকিংও হচ্ছে না। সব মিলিয়ে তারকা হোটেল শিল্প ঝিমিয়ে পড়েছে। তিনি বলেন, এমন পরিস্থিতির মধ্যেও ইউটিলিটি ব্যয়, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও স্টাফদের বেতনসহ অন্যান্য ব্যয় থেমে নেই। ব্যাংকঋণের সুদও চলমান রয়েছে। এমন অস্থিরতা চলতে থাকলে স্টাফদের বেতন দেওয়া কঠিন হয়ে পড়বে।

চলমান পরিস্থিতিতে তারকা হোটেলগুলোর ব্যবসায়িক ক্ষতির বিষয়ে জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রাজধানীর একটি পাঁচতারকা হোটেলের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আমাদের সময়কে বলেন, তার হোটেলে প্রতি দিন কোটি টাকার ওপর ব্যবসা হয়। কিন্তু গেল কয়েক দিনে এক লাখ টাকারও ব্যবসা হয়নি। তিনি বলেন, এখন কেবল বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিদেশি কিছু কর্মকর্তা ও বিশেষজ্ঞ হোটেলে অবস্থান করছেন।

রাজধানীর চার তারকা মানের এক হোটেলের কর্মকর্তা জানান, কোটা সংস্কার ছাত্র আন্দোলন ঘিরে কারফিউর কারণে দেশে ব্যবসা-বাণিজ্য প্রায় অচল। এ কারণে অতিথিরাও আসছেন না। হোটেলের সব রুম ফাঁকা পড়ে আছে। এ ছাড়া নেই কোনো অনুষ্ঠান। ফলে খাবারও বিক্রি হচ্ছে না।

জানা গেছে, ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের অন্যান্য জায়গায় পাঁচতারকা হোটেল রয়েছে ২০টি। চার তারকা মানের হোটেল রয়েছে চারটি ও তিনতারকা হোটেল রয়েছে ২২টি। এ ছাড়া প্রায় দুই হাজার বিলাসবহুল হোটেল রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আছেন প্রায় এক লাখ মানুষ।

3 thoughts on “তারকা ও বিলাসবহুল হোটেল ব্যবসায় ধস

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

আপডেট সংবাদ
বিনামূল্যে ব্রেকিং নিউজ পেতে ok ক্লিক করুন OK .

তারকা ও বিলাসবহুল হোটেল ব্যবসায় ধস

Update Time : ১১:৪১:৪৬ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৯ জুলাই ২০২৪

দিনে ক্ষতি শতকোটি টাকা

দেশের বিলাসবহুল পাঁচতারকা হোটেল ও তারকা মানের হোটেল শিল্পে বড় ধাক্কা এসেছে; বৈশ্বিক মহামারী করোনাকালের মতোই এ খাত আক্রান্ত হয়েছে কোটা সংস্কার ছাত্র আন্দোলনের জেরে। দেশের অস্থিতিশীল পরিস্থিতি ও কারফিউর কারণে দেশি-বিদেশি কোনো পর্যটক আসছেন না তারকা হোটেলে; আসছেন না বিদেশি ক্রেতারা। এ ছাড়া বিদেশি অতিথিদের বুকিং বাতিলের পাশাপাশি দেশীয় বিভিন্ন ইভেন্ট ও অনুষ্ঠানও হচ্ছে না; বরং আগে করা বুকিং বাতিল হচ্ছে। অথচ ব্যয়ের খাত খোলা রয়েছে। অর্থাৎ আয় বন্ধের মধ্যেই ইউটিলিটি বিল, স্টাফদের বেতন ও ব্যাংকঋণের সুদ গুনতে হচ্ছে এ খাতের উদ্যোক্তাদের। ফলে প্রতিদিন শতকোটি টাকার ক্ষতি হচ্ছে। শুধু তাই নয়, ব্যবসা বন্ধপ্রায় থাকায় সরকারও বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাচ্ছে। উদ্ভূত পরিস্থিতি যত দীর্ঘায়িত হবে, এ খাতের অবস্থাও ততই বেহাল হবে। সব মিলিয়ে উদ্বিগ্ন এ খাতের উদ্যোক্তারা।

জানা গেছে, রাজধানীর পাঁচতারকাসহ অন্য তারকা হোটেলগুলো এখন প্রায় অতিথিশূন্য হয়ে পড়েছে। একের পর এক বাতিল হচ্ছে রুম ও অনুষ্ঠানের আগাম বুকিং। এমনকি এসব হোটেলে সেমিনার ও ওয়ার্কশপের মতো করপোরেট ইভেন্টগুলোও এখন বন্ধ আছে। বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল হোটেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিআইএইচএ) তথ্য বলছে, তারকা হোটেলগুলোতে অতিথি কমেছে প্রায় ৯০ শতাংশ। আর রুম বুকিং নেমে এসেছে ১০ শতাংশে। পর্যটনকেন্দ্র কক্সবাজারসহ সারাদেশে বিলাসবহুল হোটেলগুলোর চলতি জুলাই মাসের বাকি দিনগুলো ও আগস্টের কিছু দিনের জন্য রুম বুকিং বাতিল করেছেন অতিথিরা।

খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, ইন্টারনেট বন্ধের কারণে প্রায় এক সপ্তাহ বিদেশি অতিথিরা যোগাযোগ করতে পারেননি। এমনকি তারা হোটেল বুকিং, বাতিল কিছুই করতে পারেননি। এ ছাড়া বেশ কিছু দেশ বাংলাদেশে ভ্রমণ সতর্কতা জারি করেছে। পাশাপাশি ব্যবসায়িক সফরও স্থগিত করে। এতে বড় ধরনের ক্ষতির আশঙ্কা করছে হোটেল কর্তৃপক্ষ।

জানতে চাইলে বিআইএইচএ সভাপতি এবং চট্টগ্রামের হোটেল আগ্রাবাদের মালিক হাকিম আলী আমাদের সময়কে বলেন, করোনাকালের মতো ক্ষতির মুখে পড়েছে দেশের তারকা হোটেল শিল্প। বর্তমানে তারকা হোটেলগুলো প্রায় অতিথিশূন্য হয়ে পড়েছে। রুম বুকিং ১০-১৫ শতাংশে নেমে গেছে। অথচ স্বাভাবিক অবস্থায় এ সময়ে হোটেলগুলোর ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ অতিথি পূর্ণ থাকে। তিনি আরও বলেন, বিভিন্ন তারকা হোটেলে বাংলাদেশে অবস্থানকারী বিদেশি কিছু অতিথি দীর্ঘ মেয়াদে অবস্থান করেন। তারাও আতঙ্কে আছেন। এ অবস্থা চলতে থাকলে হোটেলগুলো একেবারে অতিথিশূন্য হয়ে পড়বে।

বিআইএইচএ সভাপতি আরও বলেন, তার হোটেলে রুম ভাড়া ও বুকিং বাতিলের কারণে প্রায় এক কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। এটি আরও বাড়বে। তিনি বলেন, সাধারণত এ সময়ে হোটেল বুকিং সন্তোষজনক থাকলেও বর্তমান পরিস্থিতি করোনাকালকে মনে করিয়ে দিচ্ছে। আমরা এখনো ব্যবসায়িক ক্ষতির হিসাব করতে পারিনি। তবে এতদিনে এই ক্ষতির পরিমাণ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে বলে আশঙ্কা করছি।

জানতে চাইলে ইউনিক হোটেল অ্যান্ড রিসোর্টস পিএলসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এবং বিআইএইচএ স্ট্যান্ডিং কমিটি ফর প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের কো-চেয়ারম্যান মো. শাখাওয়াত হোসেন আমাদের সময়কে বলেন, বর্তমানে তারকা হোটেলের ব্যবসা নেই বললেই চলে। প্রায় হোটেলই অতিথিশূন্য হয়ে পড়েছে। দেশে অস্থিতিশিল অবস্থা বিরাজ করায় বিদেশি অতিথিরা আসছেন না। পাশাপাশি দেশি অতিথিরাও আসছেন না। তদুপরি পার্টি ও অনুষ্ঠান ইত্যাদিও হচ্ছে না। নতুন করে বুকিংও হচ্ছে না। সব মিলিয়ে তারকা হোটেল শিল্প ঝিমিয়ে পড়েছে। তিনি বলেন, এমন পরিস্থিতির মধ্যেও ইউটিলিটি ব্যয়, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও স্টাফদের বেতনসহ অন্যান্য ব্যয় থেমে নেই। ব্যাংকঋণের সুদও চলমান রয়েছে। এমন অস্থিরতা চলতে থাকলে স্টাফদের বেতন দেওয়া কঠিন হয়ে পড়বে।

চলমান পরিস্থিতিতে তারকা হোটেলগুলোর ব্যবসায়িক ক্ষতির বিষয়ে জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রাজধানীর একটি পাঁচতারকা হোটেলের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আমাদের সময়কে বলেন, তার হোটেলে প্রতি দিন কোটি টাকার ওপর ব্যবসা হয়। কিন্তু গেল কয়েক দিনে এক লাখ টাকারও ব্যবসা হয়নি। তিনি বলেন, এখন কেবল বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিদেশি কিছু কর্মকর্তা ও বিশেষজ্ঞ হোটেলে অবস্থান করছেন।

রাজধানীর চার তারকা মানের এক হোটেলের কর্মকর্তা জানান, কোটা সংস্কার ছাত্র আন্দোলন ঘিরে কারফিউর কারণে দেশে ব্যবসা-বাণিজ্য প্রায় অচল। এ কারণে অতিথিরাও আসছেন না। হোটেলের সব রুম ফাঁকা পড়ে আছে। এ ছাড়া নেই কোনো অনুষ্ঠান। ফলে খাবারও বিক্রি হচ্ছে না।

জানা গেছে, ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের অন্যান্য জায়গায় পাঁচতারকা হোটেল রয়েছে ২০টি। চার তারকা মানের হোটেল রয়েছে চারটি ও তিনতারকা হোটেল রয়েছে ২২টি। এ ছাড়া প্রায় দুই হাজার বিলাসবহুল হোটেল রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আছেন প্রায় এক লাখ মানুষ।