Dhaka ০২:০১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১০ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

গাইবান্ধায় নড়বড়ে সাঁকো দিয়ে পারাপার, দাবি জানালেও এখানো হয়নি সেতু

গাইবান্ধা সদর উপজেলা ঘঘোয়া ইউনিয়ন। ওপারে গিদারী ইউনিয়ন, মাঝখানে প্রবাহিত মানস নদ। দীর্ঘদিন থেকে দাবি জানিয়েও এখানে সেতু হয়নি। এলাকাবাসী বাধ্য হয়ে স্বেচ্ছাশ্রমে নদের উপরে কাঠের সাঁকো নির্মান করেছেন। দুই ইউনিয়নের যোগাযোগের একমাত্র ভরসা সাঁকোটি এটি এখন নড়বড়ে হয়ে গেছে। ঝুকি নিয়েই পারাপার হতে হচ্ছে লোকজনকে।
স্থানীয় সুত্রে জানা যায় দীর্ঘদিন ধরে ঘাঘোয়া ও গীদারি ইউনিয়নের মধ্যে বর্ষার সময় নৌকায় এবং শুষ্ক মৌসুমে হেটে যোগাযোগ চালু ছিল। ২০১৩ সালের মাঝামাঝি দুই ইউনিয়নের লোকজন নদের উপর স্বেচ্ছাশ্রমে কাঠের সাঁকো নির্মান শুরু করেন। কেউ টাকা, কেউ বাস, কেউ গাছ, কেউ কাঠ, রসি দিয়ে সহায়তা করেন। এতে খরচ হয় মোট প্রায় তিন লাখ টাকা। ২০১৪সালের মাঝামাঝি সাঁকো নির্মান কাজ শেষ হয়। তখন থেকে সাঁকোর উপর দিয়ে বাই সাইকেল, মোটরসাইকেল, অটোরিক্সা ভ্যান চলাচল শুরু হয়। গত বছর বর্ষায় সাঁকোটি ঝুকিপূর্ণ হয়ে পড়ে।এরপর বিগত দশ বছরে সাঁকোটি আর মেরামত করা হয়নি। ফলে সাঁকোর নিচের অংশের  অনেক খুটি নষ্ট হয়ে গেছে। কয়েকজন একসঙ্গে উঠলে সাঁকোটি দোল খায়, ঝুকি এড়াতে সাঁকোর উপর দিয়ে রিক্সা ভ্যান, অটোরিক্সা চলাচল না করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। উত্তর-দক্ষিনে প্রবাহিত মানস নদ। সাঁকোর পশ্চিম প্রান্তে ঘাঘোয়া ইউনিয়নের কাঠিহারা গ্রাম। গাইবান্ধা সদর থেকে কাঠিহারার দুরত্ব সাত কিঃ মিঃ। সাঁকোর অন্য প্রান্তে গিদারী ইউনিয়নের হিন্দু পাড়া। গতকাল মঙ্গলবার সকালে গিয়ে দেখা যায় অনেকে হেটে সাঁকো পাড় হচ্ছেন, অনেক সাইকেল চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে মোটরসাইকেল পাড়করা হচ্ছে ঠেলে। রিক্সা ভ্যান চলাচল বন্ধ থাকায় লোকজন মালপত্র মাথায় করে নিয়ে যাচ্ছেন। কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত বর্ষাকালে নদির শ্রোতে কাঠের খুটি নড়বড়ে হয়ে যায়। তখন থেকে কয়েকজন উঠলেই সাঁকোটি দোল খাচ্ছে। দূর্ঘটনা এড়াতে সবাই ধীর গতিতে পার হন। বিশেষত রাত্রে পারাপারে সমস্যা হচ্ছে বেশী। এদিকে সাঁকোর একপাশে পাকা সড়ক অন্য পাশ্বে কাচা সড়ক রয়েছে। সাঁকো ছাড়া এক ইউনিয়ন থেকে আরেক ইউনিয়নে যাতায়াতের কোন উপায় নেই। ঝুকিপূর্ণ হওয়ায় অটোরিক্সাভ্যান পাড়াপারের সুযোগ নেই। ফলে দুই ইউনিয়নের ১৫টি গ্রামের দুই লক্ষাধিক মানুষ দূর্ভোগ পোহাচ্ছেন। কাঠিহারা গ্রামের কৃষক আঃ রশিদ সরকার বলেন এখানে সেতু নির্মানে অসংখ্য বার জনপ্রতিনিধিদের কাছে আবেদন জানানো হয়েছে কিন্তু কোন কাজ হয় নাই। ঝুকি নিয়েই সাঁকো পাড়াপাড় হতে হচ্ছে।
একই গ্রামের কৃষক আমিরুল ইসলাম নিজের ভাষায় বলেন ভোটের আগত সকলে ব্রিজ বানানের দিবার চায়া ভোট কোনো নেয় ভোটে জিতলে আর দেখা পাওয়া যায় না। উত্তর ঘাঘোয়া গ্রামের মিজানুর রহমান বলেন একনা ব্রিজের জন্যে হামরা চেয়ারম্যানোক কছি কেন্তু ব্রিজ হয় নাই তাই হামরা নিজেরাই টাকা দিয়া কামলা দিয়া সাকোখ্যান বানাছি সেইখান নষ্ট হয়া গেছে। দুই ইউনিয়নের তিনটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রতিদিন তিন হইতে চার”শ শিক্ষার্থী ঝুকি নিয়ে সাঁকো পাড়াপাড় হচ্ছেন। বিদ্যালয়গুলো হচ্ছে কাঠিহারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বেপাড়িপাড়া উচ্চ বিদ্যালয় ও প্রাথমিক বিদ্যালয়। ধুতিঝোড়া গ্রামের স্কুল ছাত্র আবুল হাসান বলেন সাঁকোটি ঝুকিপূর্ণ জেনেও পাড়াপাড় হতে হচ্ছে কারন জেলা শহরে যেতে বিকল্প কোন পথ নেই। একই এলাকার আরেক ছাত্র রফিকুল ইসলাম জানায় শিশু শিক্ষার্থীরা ঝুকি নিয়ে সাঁকো দিয়ে স্কুলে যাচ্ছে। এখানে সেতুর অবশ্যই দরকার। মন্ডলপাড়া গ্রামের স্কুল শিক্ষক ময়নুল ইসলাম বলেন, শিশু শিক্ষার্থীদের জন্য এই ধরনের নড়বড়ে সাঁকোর উপর দিয়ে নদ পাড়াপাড় ঝুকিপূর্ণ। অভিভাবকরা সাঁকো পাড়াপাড় করে দেন। এখন সেতু নির্মানের কোন বিকল্প নেই। ঘাঘোয়া ইউপি চেয়ারম্যান আমিনুজ্জামান ও গিদারি ইউপি চেয়ারম্যান হারুনর-রশিদ জানান, এখানে সেতু নির্মানের জন্য উপজেলা প্রশাসনকে জানানো হয়েছে। সেতু নির্মানের ব্যবস্থা নিতে এলজিইডিতে তাগাদা দেওয়া হয়েছে। এসব বিষয়ে স্থানীয় সরকার প্রকৌশলী বিভাগের (এলজিইডি)  গাইবান্ধা কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী ছাবিউল ইসলাম বলেন, কাঠিহারা এলাকায় মানস নদের উপর সেতু নির্মানের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। উপজেলা প্রকৌশলীকে প্রকল্প তৈরি করতে বলা হয়েছে।
https://youtu.be/57HC-bVfBQI?si=pEpYzePF82f1lRZD

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

আপডেট সংবাদ

শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানার ব্যাংক হিসাব তলব

বিনামূল্যে ব্রেকিং নিউজ পেতে ok ক্লিক করুন OK .

গাইবান্ধায় নড়বড়ে সাঁকো দিয়ে পারাপার, দাবি জানালেও এখানো হয়নি সেতু

Update Time : ০২:৩২:৩৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৪
গাইবান্ধা সদর উপজেলা ঘঘোয়া ইউনিয়ন। ওপারে গিদারী ইউনিয়ন, মাঝখানে প্রবাহিত মানস নদ। দীর্ঘদিন থেকে দাবি জানিয়েও এখানে সেতু হয়নি। এলাকাবাসী বাধ্য হয়ে স্বেচ্ছাশ্রমে নদের উপরে কাঠের সাঁকো নির্মান করেছেন। দুই ইউনিয়নের যোগাযোগের একমাত্র ভরসা সাঁকোটি এটি এখন নড়বড়ে হয়ে গেছে। ঝুকি নিয়েই পারাপার হতে হচ্ছে লোকজনকে।
আরো পড়ুন: টাঙ্গাইলে নিখোঁজ হওয়া শিশু রাসেলের মরদেহ উদ্ধার
স্থানীয় সুত্রে জানা যায় দীর্ঘদিন ধরে ঘাঘোয়া ও গীদারি ইউনিয়নের মধ্যে বর্ষার সময় নৌকায় এবং শুষ্ক মৌসুমে হেটে যোগাযোগ চালু ছিল। ২০১৩ সালের মাঝামাঝি দুই ইউনিয়নের লোকজন নদের উপর স্বেচ্ছাশ্রমে কাঠের সাঁকো নির্মান শুরু করেন। কেউ টাকা, কেউ বাস, কেউ গাছ, কেউ কাঠ, রসি দিয়ে সহায়তা করেন। এতে খরচ হয় মোট প্রায় তিন লাখ টাকা। ২০১৪সালের মাঝামাঝি সাঁকো নির্মান কাজ শেষ হয়। তখন থেকে সাঁকোর উপর দিয়ে বাই সাইকেল, মোটরসাইকেল, অটোরিক্সা ভ্যান চলাচল শুরু হয়। গত বছর বর্ষায় সাঁকোটি ঝুকিপূর্ণ হয়ে পড়ে।এরপর বিগত দশ বছরে সাঁকোটি আর মেরামত করা হয়নি। ফলে সাঁকোর নিচের অংশের  অনেক খুটি নষ্ট হয়ে গেছে। কয়েকজন একসঙ্গে উঠলে সাঁকোটি দোল খায়, ঝুকি এড়াতে সাঁকোর উপর দিয়ে রিক্সা ভ্যান, অটোরিক্সা চলাচল না করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। উত্তর-দক্ষিনে প্রবাহিত মানস নদ। সাঁকোর পশ্চিম প্রান্তে ঘাঘোয়া ইউনিয়নের কাঠিহারা গ্রাম। গাইবান্ধা সদর থেকে কাঠিহারার দুরত্ব সাত কিঃ মিঃ। সাঁকোর অন্য প্রান্তে গিদারী ইউনিয়নের হিন্দু পাড়া। গতকাল মঙ্গলবার সকালে গিয়ে দেখা যায় অনেকে হেটে সাঁকো পাড় হচ্ছেন, অনেক সাইকেল চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে মোটরসাইকেল পাড়করা হচ্ছে ঠেলে। রিক্সা ভ্যান চলাচল বন্ধ থাকায় লোকজন মালপত্র মাথায় করে নিয়ে যাচ্ছেন। কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত বর্ষাকালে নদির শ্রোতে কাঠের খুটি নড়বড়ে হয়ে যায়। তখন থেকে কয়েকজন উঠলেই সাঁকোটি দোল খাচ্ছে। দূর্ঘটনা এড়াতে সবাই ধীর গতিতে পার হন। বিশেষত রাত্রে পারাপারে সমস্যা হচ্ছে বেশী। এদিকে সাঁকোর একপাশে পাকা সড়ক অন্য পাশ্বে কাচা সড়ক রয়েছে। সাঁকো ছাড়া এক ইউনিয়ন থেকে আরেক ইউনিয়নে যাতায়াতের কোন উপায় নেই। ঝুকিপূর্ণ হওয়ায় অটোরিক্সাভ্যান পাড়াপারের সুযোগ নেই। ফলে দুই ইউনিয়নের ১৫টি গ্রামের দুই লক্ষাধিক মানুষ দূর্ভোগ পোহাচ্ছেন। কাঠিহারা গ্রামের কৃষক আঃ রশিদ সরকার বলেন এখানে সেতু নির্মানে অসংখ্য বার জনপ্রতিনিধিদের কাছে আবেদন জানানো হয়েছে কিন্তু কোন কাজ হয় নাই। ঝুকি নিয়েই সাঁকো পাড়াপাড় হতে হচ্ছে।
আরো পড়ুন: গাইবান্ধায় মাটির নিচে  মিলল প্রাচীন ‘দুর্গ নগরীর’
একই গ্রামের কৃষক আমিরুল ইসলাম নিজের ভাষায় বলেন ভোটের আগত সকলে ব্রিজ বানানের দিবার চায়া ভোট কোনো নেয় ভোটে জিতলে আর দেখা পাওয়া যায় না। উত্তর ঘাঘোয়া গ্রামের মিজানুর রহমান বলেন একনা ব্রিজের জন্যে হামরা চেয়ারম্যানোক কছি কেন্তু ব্রিজ হয় নাই তাই হামরা নিজেরাই টাকা দিয়া কামলা দিয়া সাকোখ্যান বানাছি সেইখান নষ্ট হয়া গেছে। দুই ইউনিয়নের তিনটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রতিদিন তিন হইতে চার”শ শিক্ষার্থী ঝুকি নিয়ে সাঁকো পাড়াপাড় হচ্ছেন। বিদ্যালয়গুলো হচ্ছে কাঠিহারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বেপাড়িপাড়া উচ্চ বিদ্যালয় ও প্রাথমিক বিদ্যালয়। ধুতিঝোড়া গ্রামের স্কুল ছাত্র আবুল হাসান বলেন সাঁকোটি ঝুকিপূর্ণ জেনেও পাড়াপাড় হতে হচ্ছে কারন জেলা শহরে যেতে বিকল্প কোন পথ নেই। একই এলাকার আরেক ছাত্র রফিকুল ইসলাম জানায় শিশু শিক্ষার্থীরা ঝুকি নিয়ে সাঁকো দিয়ে স্কুলে যাচ্ছে। এখানে সেতুর অবশ্যই দরকার। মন্ডলপাড়া গ্রামের স্কুল শিক্ষক ময়নুল ইসলাম বলেন, শিশু শিক্ষার্থীদের জন্য এই ধরনের নড়বড়ে সাঁকোর উপর দিয়ে নদ পাড়াপাড় ঝুকিপূর্ণ। অভিভাবকরা সাঁকো পাড়াপাড় করে দেন। এখন সেতু নির্মানের কোন বিকল্প নেই। ঘাঘোয়া ইউপি চেয়ারম্যান আমিনুজ্জামান ও গিদারি ইউপি চেয়ারম্যান হারুনর-রশিদ জানান, এখানে সেতু নির্মানের জন্য উপজেলা প্রশাসনকে জানানো হয়েছে। সেতু নির্মানের ব্যবস্থা নিতে এলজিইডিতে তাগাদা দেওয়া হয়েছে। এসব বিষয়ে স্থানীয় সরকার প্রকৌশলী বিভাগের (এলজিইডি)  গাইবান্ধা কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী ছাবিউল ইসলাম বলেন, কাঠিহারা এলাকায় মানস নদের উপর সেতু নির্মানের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। উপজেলা প্রকৌশলীকে প্রকল্প তৈরি করতে বলা হয়েছে।
আরো পড়ুন: গাইবান্ধায় বাংলা ইশারা ভাষা দিবস পালন
https://youtu.be/57HC-bVfBQI?si=pEpYzePF82f1lRZD