Dhaka ০৭:১৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

গাইবান্ধার পলাশবাড়ীতে ঋণের টাকা পরিশোধ করতে সদ্যভুমিষ্ট সন্তানকে বিক্রি

গাইবান্ধার পলাশবাড়ীতে ঋনের টাকা পরিশোধ করতে জম্নের একদিন পরেই সন্তানকে বিক্রি করার অভিযোগ উঠেছে।এ ঘটনার সঙ্গে পার্শ্ববর্তী উপজেলার আরেক নারীসহ দুজন জড়িত থাকার অভিযোগ পাওয়া গেছে। তবে বিক্রি নয়, সন্তানকে দত্তক দিয়েছেন বলে দাবি বাবার।বুধবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে জেলার পলাশবাড়ী উপজেলার বরিশাল ইউনিয়নের ভবানীপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।অভিযুক্তরা হলেন ভবানীপুর গ্রামের হেরেন ঝুম্পা দম্পতি। তাদের মধ্যে হেরেন বিশ্বাস এলাকার মৃত নয়ন চন্দ্র বিশ্বাসের ছেলে। তিনি পেশায় কর্মকার। অপর দুজন গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার প্রান্ত নামের একজন ও একই উপজেলার পান্থপাড়া এলাকার গোবিন্দের স্ত্রী ভক্তিরানী।খোঁজ নিয়ে জানা যায়, হেরেন বিশ্বাস পেশায় কর্মকার হলেও তিনি নিয়মিত জুয়া খেলেন। ফলে তার বেশকিছু ঋণ হয়েছে। এ ঋণ পরিশোধ করতে সদ্য ভূমিষ্ঠ একদিনের এক ছেলে সন্তানকে বিক্রি করেছেন হেরেন। এ ঘটনার সঙ্গে গোবিন্দগঞ্জের প্রান্ত ও তারই এলাকার মানা ভক্তিরানী নামের এক নারী জড়িত।স্থানীয়রা জানান, প্রায় দুই যুগ আগে বিয়ে হয় হেরেন-ঝুম্পা দম্পতির। বিয়ের পর একে একে রনি, নিরঞ্জন, রাবিন্দ্র ও জয়দেব নামের চারটি পুত্র সন্তানের জন্ম দেন ঝুম্পা। সবশেষ মঙ্গলবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) রাতে আরও এক পুত্র (পঞ্চম) সন্তানের জন্ম দেন তিনি। মঙ্গলবার ওই সন্তানকে দুই লাখ টাকায় বিক্রি করে দেন ওই দম্পতি। সন্তান বিক্রির টাকায় ওই রাতেই বেশ কয়েকজনের ঋণ পরিশোধ করেন তারা।তবে সন্তান বিক্রির বিষয়টি অস্বীকার করেছেন অভিযুক্ত বাবা হেরেন চন্দ্র।
তিনি বলেন, আমি আগে জুয়া খেলতাম, এখন আর খেলি না। তবে, তার বেশকিছু টাকা ঋণ থাকার কথা স্বীকার করেন তিনি।সন্তান বিক্রির বিষয়ে হেরেন চন্দ্র বলেন, ‘আমি সন্তান বিক্রি করিনি, দত্তক দিয়েছি। অভাবের সংসার, শুধু ছেলেই হয়। মেয়ে হলে দিতাম না।এসময় এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন,গোবিন্দগঞ্জের প্রান্ত আর মানা ভক্তি রানীর সাহায্যে কয়েকজন এসে সন্তানকে নিয়ে গেছে। ভক্তির সঙ্গে তিনজন নারী ও একজন পুরুষ লোক মাইক্রোবাসে এসে সন্তান নিয়ে গেছে। যাদের সন্তান দিয়েছি, তাদের আমি চিনি না। কোনোদিন দেখিওনি। ওরা (ভক্তি ও প্রান্ত) জানে। শুনেছি তাদের বাড়ি রাজশাহীতে।হেরেনের স্ত্রী ও শিশুর মা ঝুম্পা রানী কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন,বাচ্চাকে কাকে দিলো আমরা চিনি না। এখন বাচ্চার জন্য অনেক মায়া হচ্ছে। সন্তানকে নিয়ে যাওয়ার সময় তারা আমাদের কাছ থেকে সাদা কাগজে সই স্বাক্ষর নিয়েছে।অভিযোগের বিষয়ে জানতে গোবিন্দগঞ্জের প্রান্তের সঙ্গে ফোনে কথা হলে তিনি সব প্রশ্নের উত্তর দেননি। সন্তান বিক্রির বিষয়ে তিনি বলেন,সন্তান বিক্রির বিষয়টি সম্পূর্ণ গুজব। তারা নিজের ইচ্ছায় দিয়েছে, আমাদের কাছে পেপারস আছে। কার কাছে শিশুটিকে দেওয়া হয়েছে আর শিশুটি এখন কোথায়—এমন প্রশ্নের উত্তরে তাদের নাম-পরিচয় দিতে রাজি হননি প্রান্ত। প্রান্তের দাবি, যারা শিশুটিকে নিয়েছেন তারা তার (প্রান্তের) দূর সম্পর্কের আত্মীয় হোন।
আরেক অভিযুক্ত মানা ভক্তি রানীর সঙ্গে আপনার সম্পর্ক কী জানতে চাইলে চটে গিয়ে প্রান্ত বলেন,আপনাকে কেন বলতে হবে, আপনার জেনে লাভ কী, এসব করে লাভ কি,  প্রান্তের সম্পূর্ণ বিপরীত বক্তব্য দেন অভিযুক্ত মানা ভক্তি রানী। তিনি ফোনে বলেন,যাদের কাছে শিশুটিকে দেওয়া হয়েছে তাদের সঙ্গে এক বিয়ের অনুষ্ঠানে পরিচয় হয় আমাদের। সেখানেই আমি জেনেছি তারা নিঃসন্তান। পরে ফোনে যোগাযোগের একপর্যায়ে তাদের শিশুটিকে দত্তক দেওয়া হয়েছে।তাদের বাড়ি কোথায়, শিশুটি এখন কোথায় আছে—এমন প্রশ্ন করলে উত্তর না দিয়েই গাড়িতে থাকার কথা জানিয়ে পরে কথা বলবেন বলে তড়িঘড়ি করে সংযোগ কেটে দেন ভক্তি।এ বিষয়ে পলাশবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আরজু মো. সাজ্জাদ হোসেন বলেন, সন্তান বিক্রি করার কোনো তথ্য আমাদের কাছে নেই। যদি কেউ সন্তান বিক্রি করে থাকে তাহলে সেটি অপরাধ। আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখবো।

One thought on “গাইবান্ধার পলাশবাড়ীতে ঋণের টাকা পরিশোধ করতে সদ্যভুমিষ্ট সন্তানকে বিক্রি

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

আপডেট সংবাদ
বিনামূল্যে ব্রেকিং নিউজ পেতে ok ক্লিক করুন OK .

গাইবান্ধার পলাশবাড়ীতে ঋণের টাকা পরিশোধ করতে সদ্যভুমিষ্ট সন্তানকে বিক্রি

Update Time : ০১:২৮:২৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৪
গাইবান্ধার পলাশবাড়ীতে ঋনের টাকা পরিশোধ করতে জম্নের একদিন পরেই সন্তানকে বিক্রি করার অভিযোগ উঠেছে।এ ঘটনার সঙ্গে পার্শ্ববর্তী উপজেলার আরেক নারীসহ দুজন জড়িত থাকার অভিযোগ পাওয়া গেছে। তবে বিক্রি নয়, সন্তানকে দত্তক দিয়েছেন বলে দাবি বাবার।বুধবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে জেলার পলাশবাড়ী উপজেলার বরিশাল ইউনিয়নের ভবানীপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।অভিযুক্তরা হলেন ভবানীপুর গ্রামের হেরেন ঝুম্পা দম্পতি। তাদের মধ্যে হেরেন বিশ্বাস এলাকার মৃত নয়ন চন্দ্র বিশ্বাসের ছেলে। তিনি পেশায় কর্মকার। অপর দুজন গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার প্রান্ত নামের একজন ও একই উপজেলার পান্থপাড়া এলাকার গোবিন্দের স্ত্রী ভক্তিরানী।খোঁজ নিয়ে জানা যায়, হেরেন বিশ্বাস পেশায় কর্মকার হলেও তিনি নিয়মিত জুয়া খেলেন। ফলে তার বেশকিছু ঋণ হয়েছে। এ ঋণ পরিশোধ করতে সদ্য ভূমিষ্ঠ একদিনের এক ছেলে সন্তানকে বিক্রি করেছেন হেরেন। এ ঘটনার সঙ্গে গোবিন্দগঞ্জের প্রান্ত ও তারই এলাকার মানা ভক্তিরানী নামের এক নারী জড়িত।স্থানীয়রা জানান, প্রায় দুই যুগ আগে বিয়ে হয় হেরেন-ঝুম্পা দম্পতির। বিয়ের পর একে একে রনি, নিরঞ্জন, রাবিন্দ্র ও জয়দেব নামের চারটি পুত্র সন্তানের জন্ম দেন ঝুম্পা। সবশেষ মঙ্গলবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) রাতে আরও এক পুত্র (পঞ্চম) সন্তানের জন্ম দেন তিনি। মঙ্গলবার ওই সন্তানকে দুই লাখ টাকায় বিক্রি করে দেন ওই দম্পতি। সন্তান বিক্রির টাকায় ওই রাতেই বেশ কয়েকজনের ঋণ পরিশোধ করেন তারা।তবে সন্তান বিক্রির বিষয়টি অস্বীকার করেছেন অভিযুক্ত বাবা হেরেন চন্দ্র।
আরো পড়ুন:গাইবান্ধার বামনডাঙ্গায় বিদ্যুৎপিষ্ট হয়ে এক কিশোরীর মৃত্যু
তিনি বলেন, আমি আগে জুয়া খেলতাম, এখন আর খেলি না। তবে, তার বেশকিছু টাকা ঋণ থাকার কথা স্বীকার করেন তিনি।সন্তান বিক্রির বিষয়ে হেরেন চন্দ্র বলেন, ‘আমি সন্তান বিক্রি করিনি, দত্তক দিয়েছি। অভাবের সংসার, শুধু ছেলেই হয়। মেয়ে হলে দিতাম না।এসময় এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন,গোবিন্দগঞ্জের প্রান্ত আর মানা ভক্তি রানীর সাহায্যে কয়েকজন এসে সন্তানকে নিয়ে গেছে। ভক্তির সঙ্গে তিনজন নারী ও একজন পুরুষ লোক মাইক্রোবাসে এসে সন্তান নিয়ে গেছে। যাদের সন্তান দিয়েছি, তাদের আমি চিনি না। কোনোদিন দেখিওনি। ওরা (ভক্তি ও প্রান্ত) জানে। শুনেছি তাদের বাড়ি রাজশাহীতে।হেরেনের স্ত্রী ও শিশুর মা ঝুম্পা রানী কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন,বাচ্চাকে কাকে দিলো আমরা চিনি না। এখন বাচ্চার জন্য অনেক মায়া হচ্ছে। সন্তানকে নিয়ে যাওয়ার সময় তারা আমাদের কাছ থেকে সাদা কাগজে সই স্বাক্ষর নিয়েছে।অভিযোগের বিষয়ে জানতে গোবিন্দগঞ্জের প্রান্তের সঙ্গে ফোনে কথা হলে তিনি সব প্রশ্নের উত্তর দেননি। সন্তান বিক্রির বিষয়ে তিনি বলেন,সন্তান বিক্রির বিষয়টি সম্পূর্ণ গুজব। তারা নিজের ইচ্ছায় দিয়েছে, আমাদের কাছে পেপারস আছে। কার কাছে শিশুটিকে দেওয়া হয়েছে আর শিশুটি এখন কোথায়—এমন প্রশ্নের উত্তরে তাদের নাম-পরিচয় দিতে রাজি হননি প্রান্ত। প্রান্তের দাবি, যারা শিশুটিকে নিয়েছেন তারা তার (প্রান্তের) দূর সম্পর্কের আত্মীয় হোন।
আরো পড়ুন:গাইবান্ধা জেলা প্রশাসকের প্রতি অতিষ্ঠ প্রধানমন্ত্রী বরারবর আবেদন
আরেক অভিযুক্ত মানা ভক্তি রানীর সঙ্গে আপনার সম্পর্ক কী জানতে চাইলে চটে গিয়ে প্রান্ত বলেন,আপনাকে কেন বলতে হবে, আপনার জেনে লাভ কী, এসব করে লাভ কি,  প্রান্তের সম্পূর্ণ বিপরীত বক্তব্য দেন অভিযুক্ত মানা ভক্তি রানী। তিনি ফোনে বলেন,যাদের কাছে শিশুটিকে দেওয়া হয়েছে তাদের সঙ্গে এক বিয়ের অনুষ্ঠানে পরিচয় হয় আমাদের। সেখানেই আমি জেনেছি তারা নিঃসন্তান। পরে ফোনে যোগাযোগের একপর্যায়ে তাদের শিশুটিকে দত্তক দেওয়া হয়েছে।তাদের বাড়ি কোথায়, শিশুটি এখন কোথায় আছে—এমন প্রশ্ন করলে উত্তর না দিয়েই গাড়িতে থাকার কথা জানিয়ে পরে কথা বলবেন বলে তড়িঘড়ি করে সংযোগ কেটে দেন ভক্তি।এ বিষয়ে পলাশবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আরজু মো. সাজ্জাদ হোসেন বলেন, সন্তান বিক্রি করার কোনো তথ্য আমাদের কাছে নেই। যদি কেউ সন্তান বিক্রি করে থাকে তাহলে সেটি অপরাধ। আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখবো।