যশোরের মনিরামপুরের মশ্মিমনগর ইউনিয়নের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ১ হাজার ৬৯৩ জন উপকারভোগী সেপ্টেম্বর মাসের চাল পাননি। উপজেলা খাদ্যগুদাম থেকে পরিবেশক চাল না নেওয়ায় চলতি মাসের চাল প্রাপ্তি নিয়েও অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।
গত ৫ আগষ্টে শেখ হাসিনার পতনের পর সৃষ্ট রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চাল বিতরণে নিরাপত্তাহীনতায় ভোগার কারণে ব্যাংকে টাকা জমা দিয়েও বিতরণের জন্য নিজের গুদামে চাল নিতে পারছেন না মশ্মিমনগর ইউনিয়নের তিন পরিবেশকের কেউ, এমনটি দাবি করছেন উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক ও সংশ্লিষ্ট তিন জন পরিবেশক।
ফলে সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর এই দুই মাসের চাল পাওয়া থেকে বঞ্চিত রয়েছেন ওই ইউনিয়নের ১ হাজার ৬৯৩ জন উপকারভোগী।উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, মশ্মিমনগর ইউনিয়নে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ১ হাজার ৬৯৩ জন উপকারভোগী রয়েছেন।
ইউনিয়নের পারখাজুরা, কাঁঠালতলা ও হাজরাকাঠি বাজারে চাল বিতরণের জন্য পরিবেশক রয়েছেন আমিন উদ্দিন, মোখলেচুর রহমান ও ফজলুর রহমান নামে তিনজন। তারমধ্যে আমিন উদ্দিনের ৫৫৩ জন, মোখলেছুর রহমানের ৫৭১ জন ও ফজলুর রহমানের ৫৬৯ জন উপকারভোগী রয়েছেন।খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পরিবেশক ফজলুর রহমান মনিরামপুর উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক আহবায়ক।
৫ আগষ্টের পর থেকে তিনি গা ঢাকা দিয়েছেন। আমিন উদ্দিন ও মোখলেছুর রহমানও আওয়ামীলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত। পরিবেশক আমিন উদ্দিন বলেন, চাল তুলব বলে সেপ্টেম্বরের টাকা ব্যাংকে জমা দিয়ে ডেলিভারি অর্ডার (ডিও) করাইছি। চাল তুলে বিতরণের সাহস পাচ্ছি না। উপকারভোগীরা চালের জন্য আসছেন।
তাদের শান্তনা দিয়ে চুপ রাখছি। মশ্মিমনগর ইউনিয়নের কাঁঠালতলা বাজারের পরিবেশক মোখলেচুর রহমান বলেন, খাদ্য অফিসের সাথে যোগাযোগ চলছে। তাঁরা বলেছেন সেনাবাহিনীর পাহারায় চাল বিতরণের ব্যবস্থা করবেন। সেরকম পরিবেশ পেলে দ্রæত চাল বিতরণ শুরু করব।
উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক ইন্দ্রোজিৎ সাহা বলেন, মশ্মিমনগর ইউনিয়ন বাদে মনিরামপুরের বাকি ইউনিয়নগুলোতে সেপ্টেম্বরের চাল বিতরণ শেষ হয়েছে। অক্টোবরের বিতরণ কাজ চলমান রয়েছে।
তিনি বলেন, মশ্মিমনগর ইউনিয়নের তিন পরিবেশক সেপ্টেম্বরের চালের টাকা জমা করেছেন। আমাদের গুদাম থেকে চাল তোলেননি। অক্টোবরের টাকা জমা দেওয়ার সময় শেষ হয়েছে। এখনো তারা টাকা জমা করেননি। পরিবেশকরা আমাদের জানিয়েছেন রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর তারা চাল তুলে বিতরণ করা নিয়ে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। আমরা তাদের সাথে যোগাযোগ রেখেছি। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সাথে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। দ্রত সময়ের মধ্যে মশ্মিমনগরে খাদ্যবান্ধবের চাল বিতরণ নিয়ে তিনি কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়ার কথা জানিয়েছেন।
এদিকে আওয়ামী লীগের পরিবেশকের মাধ্যমে খাদ্যবান্ধবের চাল বিতরণ নিয়ে সৃষ্ট পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে ইতিমধ্যে খাদ্য অধিদপ্তর নির্দেশনা জারি করেছে। দ্রæত সময়ের মধ্যে পরিবেশক পরিবর্তন করে নতুন পরিবেশক নিয়োগের জন্য উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। একই সাথে সংশোধনের জন্য উপকারভোগীদের তালিকা যাচাইবাছাই করা হবে।
এই বিষয়ে ইন্দ্রোজিৎ সাহা বলেন, নির্দেশনা পেয়েছি। এই পরিবেশক দিয়ে আমরা নভেম্বর মাসের চাল বিতরণ করার। এরপর বিজ্ঞপ্তি দিয়ে ডিসেম্বরের মধ্যে নতুন পরিবেশক নিয়োগ দেওয়া হবে। এই সময়ের মধ্যে উপকারভোগীদের তালিকা সংযোজন বিয়োজন করে আগামী বছরের মার্চের চাল নতুন পরিবেশকদের মাধ্যমে বিতরণ করা হবে।