লেখকের সঙ্গে লেখক, লেখকের সঙ্গে পাঠক, সাহিত্যানুরাগী কিংবা পাঠক ও পাঠক, প্রকাশক নানাভাবে আড্ডার মধ্য দিয়ে ভাবনার আদান-প্রদান হয়। আদর্শ এবং চিন্তাগত বিনিময় হয়। যার মধ্যে থাকে লেখার অনেক উপাদান। অমর একুশে বইমেলা মানে এসব জমজমাট আড্ডা।
বইমেলার তৃতীয় দিনেও আগের দিনের মতো ময়লা ও জঞ্জাল ছিল সোহরাওয়ার্দী উদ্যান এবং বাংলা একাডেমিতে। তবু সেসবে বিরক্তি থাকলেও মেলায় বই এবং বইকে ঘিরে আড্ডা-আলাপ বেশ জমজমাট। মেলায় বিভিন্ন প্রান্তে চলেছে আড্ডা। প্রাণবন্ত এসব আড্ডার মধ্যে বইয়ের বিক্রিও হয়েছে।
শনিবার বইমেলার দ্বিতীয় ছুটির দিনের শুরুটা ছিল শিশুপ্রহরে শিশুদের আনন্দ উচ্ছ্বাস নিয়ে। সিসিমপুরের হালুম, ইকরিরা দিনের বিভিন্ন সময়ে শিশুদের আনন্দ দিয়েছে। শিশুরা কিনেছে বইও। কিন্তু মেলায় অনেক বই প্রকাশ হয় যেগুলো সুসম্পাদিত নয়।
এ বিষয়ে কথাসাহিত্যিক আনিসুল হক যুগান্তরকে বলেন, অনেক প্রকাশক সুন্দর প্রচ্ছদের বই প্রকাশ করেন। কিন্তু সম্পাদনায় নজর নেই। আমাদের এত প্রকাশনীর প্রয়োজন নেই। যেসব প্রকাশনা বেতন দিয়ে সম্পাদক রেখে সুসম্পাদিত বই প্রকাশ করবেন কেবল তাদেরকেই প্রয়োজন।
এদিন বইমেলায় লোকসমাগম ছিল বেশ। নবীন-প্রবীণ অনেক লেখক এসেছিলেন। বর্তমানে বইমেলায় তরুণ লেখকদের সমাগম বেশি। গল্প, উপন্যাস, কবিতার পাশাপাশি সংগীত, ভ্রমণ, বিজ্ঞান, চিকিৎসাসহ বিবিধ বিষয় নিয়ে তারা লিখছেন। মেলায় এদিন শেষ সময় পর্যন্ত পাঠক-ক্রেতারা ছিলেন।
মাঘের শেষ সময়ে তরুণীদের অনেকেই এসেছিলেন ফুলের টায়রা পরে। বসন্ত দিন আসছে তা যেন জানান দিচ্ছেন তারা। বিকাল বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় দ্বিশতজন্মবার্ষিক শ্রদ্ধাঞ্জলি : মাইকেল মধুসূদন দত্ত শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন রফিকউল্লাহ খান। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন খসরু পারভেজ এবং হোসনে আরা। সভাপতিত্ব করেন মুহম্মদ নূরুল হুদা।
এদিন লেখক বলছি অনুষ্ঠানে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন কবি সাইফুল্লাহ মাহমুদ দুলাল, কথাসাহিত্যিক ও অনুবাদক সালেহা চৌধুরী, লালন গবেষক আবু ইসহাক হোসেন এবং কবি ও প্রাবন্ধিক মামুন মুস্তাফা।
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কবিতা পাঠ করেন কবি নাসির আহমেদ, তারিক সুজাত, শাহনাজ মুন্নী এবং নাহার মনিকা। আবৃত্তি করেন মিলন কান্তি দে, শাহাদাৎ হোসেন নিপু ও আফরোজা কণা।
এছাড়া ছিল ঝর্ণা আলমগীরের পরিচালনায় ক্রান্তি শিল্পীগোষ্ঠী এবং লক্ষ্মীকান্ত হাওলাদারের পরিচালনায় শেখ রাসেল ললিতকলা একাডেমির পরিবেশনা। সংগীত পরিবেশন করেন সাজেদ আকবর, সালমা আকবর, লাইসা আহমেদ লিসা, অনুরাধা মণ্ডল, মুহা. আব্দুর রশীদ, সঞ্চিতা রাখি ও পাপড়ি বড়ুয়া। বাংলা একাডেমির তথ্যমতে এদিন নতুন বই এসেছে ৭৪টি।
এ বইগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো মুহম্মদ নূরুল হুদার ‘প্রাণের মেলায় শেখ হাসিনা’ (বাংলা একাডেমি), আতিউর রহমানের ‘বাংলাদেশের নেতৃত্বের পরম্পরা ও উন্নয়ন’ (পুঁথিনিলয়) কানাই চক্রবর্তীর ‘ইতিহাসে নেই’ (অনুপম) অন্যতম। আজ ৪ ফেব্রুয়ারি অমর একুশে বইমেলার ৪র্থ দিন। মেলা শুরু হবে বিকাল ৩টায়। চলবে রাত ৯টা পর্যন্ত।
আরো পড়ুন: সন্তান মেয়ে হওয়ায় আছড়ে মারলেন বাবা-মা!
3 thoughts on “বইমেলায় লেখক-পাঠকের জম্পেশ আড্ডা”