বাংলাদেশের বৃহত্তম জগদ্ধাত্রী পুজো প্রতি বছর অনুষ্ঠিত হয় বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলার কলসকাঠিতে।
জগদ্ধাত্রী পুজোতেও ষষ্ঠী থেকে দশমী পর্যন্ত দেবী জগদ্ধাত্রীর পুজো করা হয়। প্রতিবছরের ন্যায় এই বছরও বর্ণাঢ্য আয়োজন, বর্ণিল আলোকসজ্জায় লক্ষ লক্ষ লোকের সমাগমের মধ্য দিয়ে ও শত বছরের ঐতিহ্য নিয়ে বাকেরগঞ্জ উপজেলার হতে যাচ্ছে তিন দিনব্যাপী শ্রীশ্রী সার্বজনীন জগদ্ধাত্রী পূজা উৎসব। বরিশাল বিভাগের দক্ষিণ অঞ্চলের মধ্যে একমাত্র কলসকাঠীতে প্রতি বছর এ পূজা অনুষ্ঠিত হয়। প্রথম দুই দিন এ পূজা উপভোগ করতে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে হাজার হাজার দর্শনার্থীর ঢল নামে কলসকাঠীতে। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মতে সমুদ্ভাসিত বার্তা নিয়ে আসছেন মা জগদ্ধাত্রী। জগদ্ধাত্রী পূজাকে কেন্দ্র করে কলসকাঠী রূপ নিয়েছে এক মিলনমেলায়।
কলসকাঠীতে অবস্থিত প্রাচীন জনপদ তের জমিদারির ইতিহাস। একটি প্রাচীন জমিদারদের বাড়ি বললে কম বলা হয়, বরং বলা হয় একটি প্রাচীন শহর। জমিদার বাড়ির পাশেই অবস্থিত প্রাচীন শিব মন্দির। যেখানে রয়েছে মূল্যবান কষ্ঠি পাথরের মূর্তি। মন্দিরের সামনে রয়েছে বেদী, যেখানে পশু বলি দেওয়া হয়। প্রতিবছর এই মন্দিরেই মহাসমারোহে মা জগদ্ধাত্রীর আরাধনা করা হয়। তিন দিন ধরে চলে মায়ের পূজা। জগদ্ধাত্রী পূজাকে কেন্দ্র করে কলসকাঠী রূপ নেয় এক মিলনমেলায়। দেশের দূর দূরান্ত থেকে লাখ লাখ মানুষ ছুটে আসে প্রাচীন এই জগদ্ধাত্রী পূজাতে। অনুষ্ঠানটি হিন্দু সম্প্রদায়ের হলেও উপভোগ করার জন্য সকল ধর্মের লোকজন ছুটে আসে কলসকাঠীতে। জগদ্ধাত্রী পূজা উপলক্ষে তিন দিন হিন্দু-মুসলিম-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টা নসহ সকল ধর্মের লাখো মানুষের সমাগম হয় এই পূজায়। দেশের দূর-দূরান্ত থেকে অনেক মানুষ ছুটে আসে জগদ্ধাত্রী পূজা উপভোগ করতে।
জগদ্ধাত্রী পূজা উপলক্ষে ৯ টি মন্দিরে নির্মাণ করা হয়েছে প্রতিমা। সাজসজ্জায় যেন কোনো মন্দির পিছিয়ে নেই। কলসকাঠী কালীবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে, জনতা ব্যাংকের গলিতে, কর্মকারপাড়া এবং বাজারের রাস্তায় রাস্তায় দেশ-বিদেশের ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন দোকানে খেলনাসহ পসরা সাজিয়ে বসেন। প্রতি বছরের ন্যায় এবছরও কলসকাঠীতে মোট নয়টি মন্দিরে অর্থাৎ ৩টি মন্দিরে সার্বজনীন ও ৬টি মন্দিরে পারিবারিকভাবে এ পূজা উদযাপিত হবে। প্রতিমা তৈরি, সাজসজ্জা ও লাইটিং প্রতিযোগিতায় দুটো মন্দির শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে একটি কালীবাড়ি পূজা মন্দির আরেকটি সৎসংঘ পূজা মন্দির।
কালীবাড়ি পূজা মন্দিরের সভাপতি চন্দ্রনাথ মুখার্জী চান জানান, জগদ্ধাত্রী পূজায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষার্থে স্থানীয় প্রশাসন, সেনাবাহিনী, পুলিশ, আনসার, গ্রাম পুলিশসহ সকল আইন শৃখলা বাহিনী সর্বদা নিরাপত্তায় নিয়োজিত আছেন। পুজো উপলক্ষে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ব্যবসায়ীরা দোকান নিয়ে বসেছেন।এছাড়াও পুজোয় বিনোদনের জন্য বায়োস্কোপ, পুতুল নাচ, রাধা চক্কর, গানের আসর, ব্যান্ড শো সহ নানান অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়েছে। জগদ্ধাত্রী পুজো প্রতি বছর কলসকাঠিতে মোট ৯ টি মন্ডপে জগদ্ধাত্রী পুজো উদযাপিত হয়। তবে কালীবাড়ি পুজো মন্ডপ ও সৎ সঙ্গ পুজো মন্ডপে প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে এই পুজো উদযাপিত হয়ে থাকে।